রেললাইনে মেডিকেলছাত্রীর মৃত্যু- পুলিশের সন্দেহ, জেরিনাকে হত্যা করা হয়েছে

বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মুন জেরিনা আরাবিনকে (২০) হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যাকারী সন্দেহে পুলিশ নিহতের ছেলেবন্ধু মহিউদ্দিন স্মরণকে আটক করেছে।
গত শনিবার রাতে জেরিনাকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান মহিউদ্দিন। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুজন ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনের কাছে রেললাইনে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় ওই ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে আসা জেরিনার স্বজনেরা সন্দেহ প্রকাশ করলে পুলিশ রাতেই মহিউদ্দিনকে আটক করে।
গতকাল রোববার রেল পুলিশ (জিআরপি) মহিউদ্দিন ও জেরিনার স্বজনদের নিয়ে ঘটনাস্থল চিহ্নিত করেছে। পুলিশ বলেছে, খিলক্ষেত এলাকায় রেললাইনের পাশে জেরিনার এক পাটি জুতা পাওয়া যায়। সেখানে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে বলেছেন, কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মহিউদ্দিন জেরিনাকে ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রোববার মহিউদ্দিন ও তাঁর মা-বাবাকে আসামি করে কমলাপুর জিআরপি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন জেরিনার খালু হারুন অর রশীদ। ওই মামলায় মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। জেরিনার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যরা কানাডায় থাকেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমলাপুর জিআরপি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোর থেকে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে খিলক্ষেতের বনরূপাসংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে জেরিনার একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাশের এক মাছের খামারের লোকজন পুলিশকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে দুই তরুণ-তরুণী রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে কথা-কাটাকাটি করছিলেন। একপর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটিকে ধাক্কা দেন। এতে কমলাপুরগামী একটি ট্রেনের সঙ্গে মেয়েটির ধাক্কা লাগে।
এসআই আলমগীর বলেন, ঘটনাস্থল থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেলেও মহিউদ্দিন নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না। অসংলগ্ন কথা বলছেন। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানানো হবে।
যোগাযোগ করা হলে জেরিনার খালু হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গত শনিবার দুপুরের দিকে আমি জেরিনাকে আমার রামপুরার বাসায় নিয়ে আসি। থাকার কথা থাকলেও বিকেলের দিকে একটি ফোন পেয়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’ হারুন অর রশিদ আরও বলেন, একটি ছেলের সঙ্গে জেরিনার বন্ধুত্ব ছিল বলে তিনি শুনেছেন। মহিউদ্দিন ওই বন্ধু কি না, তা তিনি জানেন না।
খালু হারুন অর রশিদ জানান, জেরিনার মা-বাবা ও ভাইবোন থাকে কানাডায়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জেরিনাই বড়। কানাডায় জন্ম হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি বাংলাদেশেই থাকতেন। নিজের ইচ্ছায় উত্তরার একটি বেসরকারি মেডিকেলে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। থাকতেন কলেজ-সংলগ্ন হোস্টেলে।
ঘটনার দিন রাতে মহিউদ্দিনের মা শাহনাজ বেগম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে জেরিনার সম্পর্ক ছিল।
মহিউদ্দিন যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারের সঙ্গে তিনি উত্তরায় থাকেন।
জেরিনার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, লাশ হিমঘরে রাখা হবে। আজ সোমবার কানাডা থেকে জেরিনার বাবা-মা দেশে আসবেন। পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.