সংসদ গ্যালারি

উত্তম চক্রবতর্ী আগ্রহ নেই সরকারী দলের এমপিদেরও। কারণ একটাই বিরোধী দল নেই, উত্তপ্ত বিতর্ক বা ওয়াকআউট নেই। অনেক দিন হয় না অভিজ্ঞ সিনিয়র সাংসদদের সাংবিধানিক ও আইনগত বিতর্ক।
কোরাম সঙ্কট না থাকলেও শুরম্নতে ৬০ জনের এই কোরাম পূর্ণ করতে গলদঘর্ম অবস্থা হয় হুইপদের। ফলে প্রতিদিনই শুরম্নটা ২০/২৫ মিনিট বিলম্বে হওয়া যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এমনকি প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রীর যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ার কারণে মঙ্গলবার সংসদ কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বিভ্রাটও ঘটে। এক পর্যায়ে চীফ হু্ইপকে যথাসময়ে এমপিদের উপস্থিত থাকার জন্য ফোর নিয়ে অনুরোধও জানাতে হয়। তবে বৃহস্পতিবার স্পীকার ছিলেন একাই এক শ'। স্পীকার কুদৃষ্টি দেননি! মহিলা সংসদ সদস্যদের প্রতি স্পীকারের একটু বেশি প্রীতি নতুন কিছু নয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার এটি করতে গিয়ে একটু ভুলই করে বসেন স্পীকার। নির্ধারিত কার্যসূচী অনুযায়ী প্রশ্নোত্তর পর্বে ৩৫৮ নম্বর প্রশ্ন বাদ দিয়ে সাংসদ সানজিদা খাতুনকে ৩৫৯ নম্বর উত্থাপন করতে বলেন। চার-পাঁচ সাংসদ স্পীকারের ভুলটি ধরিয়ে দিলে এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, "মনে হয় উনার (সানজিদা খাতুন) প্রতি আমার একটু বেশিই আকর্ষণ হয়েছে।'' পরে নির্ধারিত প্রশ্নের জন্য ফোর পেলে সানজিদা খাতুন বলেন, 'মাননীয় স্পীকার, আমার দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।' রসিক স্পীকার চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন। তাৎৰণিক জবাব, "মাননীয় সদস্য, আপনার দিকে আমার দৃষ্টি আছে, কিন্তু আপনার দিকে কুদৃষ্টি কিন্তু দেইনি।' এ সময় সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন।
মাঝপথে মন্ত্রী উধাও!
বৃহস্পতিবার ছিল বিদু্যত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব। আছরের নামাজের বিরতির আগ পর্যনত্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক সাংসদদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় নামাজের বিরতির পর অধিবেশন পুনরায় শুরম্ন হলে। যথারীতি স্পীকার প্রশ্ন করার জন্য ফোর দেন সাংসদ সানজিদা খাতুনকে। তিনি প্রশ্ন করার পর স্পীকার বিদু্যত প্রতিমন্ত্রীকে ফোর দিতে গিয়ে দেখেন তাঁর আসন ফাঁকা। হুইপের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পীকার বলেন, মন্ত্রী তো ছিলেন, মাঝপথে কোথায় গেলেন? এটা তো ঠিক না। বাধ্য হয়ে স্পীকার বিদু্যত প্রতিমন্ত্রীর সব প্রশ্ন বাদ দিতে গেলে হনত্মদনত্ম হয়ে নির্ধারিত আসনে এসে বসেন এনামুল হক। তখন স্পীকার টিপ্পনি কেটে বলেন, 'মাননীয় মন্ত্রীর বোধ হয় 'প্রকৃতির ডাকে' সাড়া দিতে গিয়ে দেরি হয়েছে। এ সময় সবাই একযোগে হেসে ওঠেন। তবে প্রতিমন্ত্রী তাঁর বিলম্বের কারণ উলেস্নখ করেননি।
নৌকা মিস হয়নি!
একেই বলে ভাগ্য! অনেক সংসদ সদস্য দীর্ঘৰণ হাত না তুলেও স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হন। আর আওয়ামী লীগের আবদুর রহমান নিজের আসনে বসে হাত তুলতেই ফোর পান। ফোর পেতে ব্যর্থ ক'সাংসদ হাস্যরসে বিষয়টি স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে রসিক স্পীকার বলেন, "আপনি সব সময়ই বাস মিস করেন। তবে আজ নৌকা মিস করেননি।" জবাবে আবদুর রহমান বলেন, মাননীয় স্পীকার, 'বাস মিস করার বিষয়টি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু এখন রেলযোগাযোগের দিন আসছে। তাই রেল ধরার জন্য বসে ছিলাম। তাই কিছু সময় বিলম্ব। তবুও ফোর দেয়ায় আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।'
সাংবাদিকদের কোরাম নেই!
কোরাম শব্দটি এখন দেশজুড়ে পরিচিত। সংসদে কোরাম সঙ্কটের কারণে বিলম্ব অধিবেশন শুরম্ন হওয়া যেন অনেকটাই রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর এ রকম হলে সাংবাদিকরা তা প্রকাশ করতে ভুল করেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘটেছে ঠিক উল্টো। সংসদের সংবাদ সংগ্রহকারী অধিকাংশ সাংবাদিক স্পীকারেরই উদ্বোধন করা সাত তলার মিডিয়া রম্নমে বসে ই-মেল ব্যবহার করে নিউজ পাঠাতে ব্যসত্ম থাকেন। মিডিয়া রম্নম চালুর পর নির্ধারিত দু'টি সাংবাদিক গ্যালারিতে এমনিতেই সাংবাদিকদের উপস্থিতি থাকে কম। এই সুযোগটাই নেন স্পীকার। সংসদ অধিবেশন শুরম্নর সময় স্পীকার সাংবাদিক গ্যালারিতে তাকিয়ে দেখেন, উপস্থিত মাত্র ৩/৪ জন। এটা দেখে স্পীকার দিনের কার্যসূচী শুরম্ন করেন সাংবাদিকদের কোরাম সঙ্কট নিয়েই। বলেন, 'আমাদের কোরাম থাকলেও সাংবাদিকদের কোরাম নেই।' এ সময় সবাই হেসে ওঠেন।
মাইক ফাইট্যা ফালাইয়েন না!
সংরৰিত আসনের সরকারী দলের মহিলা সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি এমপি ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সুবক্তা হিসেবেও অধিক পরিচিতি তাঁর। কিন্তু সমস্যা হলো, তিনি খুব একটা আসত্মে কথা বলতে পারেন না। বৃহস্পতিবার একটি সম্পূরক প্রশ্নের জন্য ফোর পান শাহীন মনোয়ারা হক। পেয়েই উচ্চকণ্ঠে প্রশ্নটি বলা শুরম্ন করলে বাদ সাধেন স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। স্বভাবসুলভ কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় বলে ওঠেন. "মাননীয় সদস্য, আপনি তো মাইক একেবারে ফাটাইলাইতাছেন!"

No comments

Powered by Blogger.