নীলফামারী রণক্ষেত্র শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে- আহত শতাধিক, আমিরসহ গ্রেফতার ২০

 নীলফামারীতে শনিবার বিকেলে ছাত্রলীগ ও জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে জেলা শহর রণৰেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে জামায়াত-শিবিরের পাল্টাপাল্টি হামলায় পুলিশসহ উভয় পৰের শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
আহতদের নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতাল ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে গুলি ও টিয়ারশেল নিৰেপ করতে হয়। প্রায় এক ঘন্টা পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে নীলফামারীতে শনিবার বিকেলে ছাত্রলীগ ও জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে ঘটনায় পুলিশ জেলা জামায়াতের আমির এ্যাডভোকেট শাহ মুজ্জাম্মেল হকসহ ২০ জন জামায়াত ও শিবিরের নেতাকমর্ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করেন। শনিবার বিকেলে ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা চালানোর ঘটনায় ছাত্রলীগের পৰে দায়ের করা মামলার প্রেৰিতে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
প্রত্যৰদশর্ীরা জানায়, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নীলফামারী জেলা জামায়াতের পৰে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগ কর্তৃক জামায়াত-শিবিরের অফিস ভাংচুর ও রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমানসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকমর্ীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মিছিল বের করার প্রস্তুতি হিসাবে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের কার্যালয় আল-হেলাল একাডেমীতে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকে। বিকেল ৫টার দিকে জেলা জামায়াতের আমির এ্যাডভোকেট শাহ মুজাম্মেল হক, নায়েবে আমির আজিজুল হক এর নেতৃত্বে জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীরা একটি মিছিল বের করলে পুলিশের বাধায় মিছিলটি আল-হেলাল একাডেমীতে ফিরে যায়। অপর দিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এর কিছুৰণ পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ সরকারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা জামায়াত ও শিবিরের আল-হেলাল একাডেমীর অফিসের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় আল-হেলালের ভিতর থেকে মিছিলটিকে লৰ্য করে ইটপাটকেল ও বোমা নিৰেপ করা হয়। এতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ গুরম্নতর আহত হলে উভয় পৰের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরম্ন হয়ে যায়। এলাকাটি এ সময় রণৰেত্রে পরিণত হয়। ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং ভাংচুর শুরম্ন হয়ে যায়। জামায়াত অফিস থেকে বোমা আর ইট ও পাথর বৃষ্টির মতো ছুড়তে থাকলে অসংখ্য ছাত্রলীগের নেতাকমর্ী আহত হয়। এরপর ছাত্রলীগ আরও শক্তি নিয়ে জামায়াত অফিসে হামলা চালায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় ১০/১২ রাউন্ড টিয়ারসেল নিৰেপ ও রবাট বুলেট ছুড়েছে বলে প্রত্যৰদশর্ীরা জানায়।
এ সময় নীলফামারী সদর থানার ওসি নুরম্নল ইসলাম, এসআই সাহাবুদ্দিন কনস্টেবল আশরাফ আলীসহ ১০ পুলিশ সদস্য ও নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমানসহ ছাত্রলীগের প্রায় ৭০ জন এবং জামায়াত-শিবিরের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক বলেন, জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তার প্রতিবাদে মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি করে আল-হেলাল একাডেমীর সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে তারা আমাদের মিছিলকে লৰ্য করে ইটপাটকেল ও বোমা নিৰেপ করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামায়াত ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে তারা তাদের অফিসে অগি্নসংযোগের চেষ্টা করলে দমকল বাহিনী আগুন নিভিয়ে ফেলে। তিনি দাবি করেন আমাদের শতাধিক নেতাকমর্ী আহত হয়েছে।
এদিকে, জামায়াত-শিবিরের আহতদের মধ্যে জেলা জামায়াতের আমির শাহ মুজাম্মেল হক, শেরশাহ, ইসমাইল, নুরম্নল হুদা, ছাদেক হোসেন আহত হওয়ার খবর জানা গেলেও অন্যদের নাম জানা যায়নি। জামায়াতের আহতরা রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসায় নেয়া হয় বলে জামায়াত সূত্র দাবি করে।
জামায়াত-নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কমর্ী জানান, জামায়াত-শিবিরের এ পর্যনত্ম ২০ নেতাকমর্ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে তিনি কারও নাম বলতে পারেননি।
নীলফামারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রশিদুল হক বলেন, এ ঘটনায় ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে এবং জামায়াত শিবিরের ৪/৫জন কর্মী আহত হওয়ার কথা শুনেছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ কাদানে গ্যাস নিৰেপ করেছে বলে স্বীকার করলেও কত রাউন্ড তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
প্রায় একঘণ্টাকালব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মমতাজুল ইসলাম ও ডা. মুজিবুল হাসান শাহীনকে চিকিৎসকদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.