মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে গৃহবধূরাও পুঁজিবাজারে- সাবধানী হওয়ার পরামর্শ- * ৬ হাজার কোটি টাকার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দ্রুত বাজারে আসার অনুমতি দেয়া উচিত- * বিনিয়োগে হুজুগ আর গুজবে সতর্ক থাকতে হবে by খায়রুল হোসেন রাজু

প্রায় এক বছর ধরে শেয়ারবাজারের রমরমা অবস্থা দেখে মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে গৃহবধূরাও শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিৰিত সচেতন এবং অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও।
মোটকথা শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব লৰ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এ চাঙ্গা বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে বাজারে তারল্য ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন ও লাভজনক কোম্পানির শেয়ার বাজারে না এলে বড় ধরনের ৰতি হতে পারে। এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, বহু ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে শেয়ারবাজার আজ তার নিজম্ব জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে শিৰিত, সচেতন এবং অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিও এ্যাকাউন্টের সংখ্যাও বাড়ছে। ব্রোকারেজ হাউস এবং ডিএসইর বিভিন্ন সত্মরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যাও বাড়ছে। যা বাজারের জন্য সার্বিক অনুকূলে। তবে বাজারে সে অনুযায়ী শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে না। মিউচু্যয়াল ফান্ডও বাজারে আসছে না। এখন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মিউচু্যয়াল ফান্ড বাজারে আসার জন্য আবেদন করেছে। এগুলো বাজারে এলেই বাজার তার গতিকে আরো শক্তিশালী করতে পারবে। কারণ মিউচু্যয়াল ফান্ড বাজারের ঝুঁকি বহন করে, শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং বাজার ৰতি হওয়া থেকে রৰা করে। তাই শীঘ্রই মিউচু্যয়াল ফান্ডগুলোকে বাজারে আসার অনুমতি দেয়া উচিত। একই সঙ্গে সরকারের হাতে থাকা নতুন ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকেও বাজারে নিয়ে আসা উচিত।
ডিএসইর গত এক মাসের হিসেবে বাজার মূলধন ১ লাখ ৯১ হাজার ৪০৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৪৮ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৫১০ টাকায় দাঁড়ায়। বাজার মূলধন জিডিটির ৩০.০৩ শতাংশ থেকে ৩৪.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই সাধারণ মূল্যসূচক ৪৫৩৫.৫৩ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৫৩১২.৪৪ পয়েন্ট দাঁড়ায়। এ বছর ৩ জানুয়ারি ১০৯৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২৭ জানুয়ারি লেনদেন হয় ১৫১৬ কোটি টাকার। ব্রোকারেজ হাউসের সংখ্যা ৩৮৮ থেকে বেড়ে ৪২২ টিতে পেঁৗছায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং সিলেটে ডিএসইর অফিস নেয়া হয়েছে। বাজারে সার্বিক কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিএসই থেকে আরও অফিস নেয়া হবে। জানুয়ারির প্রথমে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৩২৩ টি বিও এ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু মাসের শেষে এটি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২১ লাখে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে যেখানে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ২৮২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হতো, এখন সেখানে গড়ে ১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এভাবেই ঢাকার পুঁজিবাজার প্রসারিত হচ্ছে। গড়ে মার্কেট প্রাইস আরনিং রেসিও (পিই) ২৫.৬৫ থেকে ২৯.২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সামগ্রিক দিক দিয়ে বাজার চাঙ্গা হলেও নতুন কোম্পানির সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বৃদ্ধি পাচ্ছে না মিউচু্যয়াল ফান্ডের সংখ্যাও। ফলে বাজার চাঙ্গা হলেও শেয়ারের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। বিপরীতে তারল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে এবং বাজারকে আরও চাঙ্গা করতে সরকারের হাতে থাকা লাভজনক ও ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন ২১ কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরম্ন করে দিয়েছে আইসিবি। এ মাসের মধ্যেই সংশিস্নষ্ট কোম্পানিগুলোর সার্বিক বিষয় নিয়ে আইসিবি আলোচনা করবে। এসব কোম্পানি বাজারে এলে চাঙ্গা বাজারে যে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে তা কমে আসবে। শেয়ারের সরবরাহও বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীরা লাভজনক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাৰাতকালে বলেছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেগবান করার লৰ্যে আগামী জুনের মধ্যেই সরকারী কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজও শুরম্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, শেয়ারবাজার বর্তমানে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। বাজারের এ গতিকে ধরে রাখতে হলে সরকারের হাতে থাকা শেয়ার ছাড়া দরকার। তা না হলে বাজারের তারল্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
দেশের বিদু্যত, গ্যাসসহ অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় সাধারণত ব্যাংকগুলো নতুন ও পুরনো শিল্প চাঙ্গা করতে তেমন বিনিয়োগ করছে না। একই সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকগুলো তাদের অতিরিক্ত তারল্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। একই সঙ্গে স্বল্প ও মধ্য পুঁজি এবং বড় পুঁজিপতিরা ব্যাংক ডিপোজিট করছে না। কারণ ব্যাংকের সুদের হার কম। ফলে তারা তাদের পুঁজি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন। এর পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কমিশনের আইন অমান্য করে গ্রাহকদের লোন দিয়ে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করছেন। এসব কারণেই বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, বাজার চাঙ্গা রয়েছে ঠিকই কিন্তু এখানে ভাল শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে করে বাজারে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারের এ পরিস্থিতিতে শেয়ারের সরবরাহ জরম্নরী। তা না হলে বাজারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজারে গৃহবধূ থেকে শুরম্ন করে সব ধরনের বিনিয়োগকারী আসতে শুরম্ন করেছে। যেটি এর আগে ছিল না। তবে এখন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ৰেত্রে বুঝে শুনে ভাল ও লাভজনক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত। কোনোভাবেই হুজুগে কিংবা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে বাজারকে গতিশীল বলা যাবে। কারণ বাজারে লেনদেন, বিনিয়োগকারী এবং পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমবেশি নতুন কোম্পানিও বাজারে আসছে। তবে বাজারের এ গতিকে ধরে রাখতে হলে বেশি বেশি নতুন ও লাভজনক কোম্পানি শেয়ার মার্কেটে নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিং করতে ডিএসই ও এসইসিতে আরও লোকবল নিয়োগ করতে হবে। মোটকথা শক্ত হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলেই বাজার আরও চাঙ্গা হবে।

No comments

Powered by Blogger.