আন্দোলনে নামার আগে তৃণমূলের মতামত চায় বিএনপি- দশ ভেনু্যতে দু'মাস ধরে সেমিনারের সিদ্ধানত্ম সিলেট থেকে শুরু

 সরকারের বিরম্নদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুমকি দিলেও এ মুহূর্তে আন্দোলনের কোন কর্মসূচী দিচ্ছে না বিএনপি। এৰেত্রে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করতে চায় দলটি।
আন্দোলন-কর্মসূচী দেবার আগে জনগণকে সচেতন এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনোভাব বুঝতে চায় দলের হাইকমান্ড। দলের একটি সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে আন্দোলন-কর্মসূচী দিয়ে তা ফপ করলে বিএনপি ৰতিগ্রসত্ম হবে। তৃণমূলে বিরাজমান অভ্যনত্মরীণ কোন্দল নিরসন এবং নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার পর তাদের মতামতের ভিত্তিতেই আন্দোলন-কর্মসূচী নির্ধারণ করতে চায় দলের নীতিনির্ধারকরা। এ লৰ্যেই ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বিএনপির ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের সুপারিশমালা পর্যালোচনা, মূল্যায়ন এবং দলের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে সেমিনার করবে বিএনপি। সারা দেশের দশটি ভেনু্যতে অনুষ্ঠিত হবে এসব সেমিনার। আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি সিলেট ভেনু্যতে শুরম্ন হয়ে মার্চ মাসের মধ্যে এ কর্মসূচী শেষ হবে। সেমিনারে জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা আলোচনায় অংশ নেবেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত দেবেন। সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দশটি দলে ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শনিবার দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সেমিনার কর্মসূচীর বিষয়ে বিসত্মারিত তথ্য জানানো হয়।
দলীয় সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে থেকেই দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারের বিরম্নদ্ধে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মু্যরাল ভাঙ্গা, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন, হয়রানিমূলক মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন অভিযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুমকি দেয় বিএনপি নেতারা। পরে এসব অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় স্বাৰরিত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক নিয়ে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারককে দেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে সরকারের বিরম্নদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন বিএনপি নেতারা। তবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কঠোর আন্দোলনের কথা বললেও আন্দোলন-কর্মসূচী দেবার আগে সরকারের বিভিন্ন ৰেত্রের ব্যর্থতা, সরকারের দেশবিরোধী কর্মকা- সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেন। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পর্কে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় তিনি সরকারের বিরম্নদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখলেও আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেননি। সূত্র মতে, দলের অনেক সিনিয়র নেতাই আন্দোলন-কর্মসূচী ঘোষণার পৰে অবস্থান নিলেও চেয়ারপার্সন তাদের জানান, আগে ঢাকা মহানগরসহ যেসব জেলা-উপজেলায় অভ্যনত্মরীণ কোন্দল আছে, তা নিরসন করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে সরকারের বিরম্নদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে আন্দোলন সফল হবে না বলে তিনি মত দেন। এৰেত্রে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূল নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং তাদের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধানত্ম নেয়ার কথা জানান। এরই অংশ হিসেবে দলকে পুনর্গঠিত করতে কিছু কর্মসূচী নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে দলের হাইকমান্ড। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সারাদেশে সেমিনার করার কর্মসূচী দলকে পুনর্গঠিত করতেই নেয়া হয়েছে জানিয়ে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব, বর্তমান সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে ২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু করেন। এতে তৃণমূলের নেতা- কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লৰ্য করা যায়। তারেক রহমানের লৰ্য ছিল শহরকেন্দ্রিক রাজনীতি বাদ দিয়ে গ্রামভিত্তিক, উন্নয়নমুখী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। সে লৰ্যেই তারেক রহমান ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছিল মনত্মব্য করে তিনি বলেন, তারেক রহমানের সফল এ উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ও গুরম্নত্ব অনুধাবন করে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের সুপারিশমালা পর্যালোচনা ও বিভিন্ন পেশার মানুষের পরামর্শ নিতেই সারাদেশের দশটি ভেনু্যতে তৃণমূল প্রতিনিধি সভার প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনারের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। দলকে পুনর্গঠিত করতে আমাদের কিছু কর্মসূচী নেয়া প্রয়োজন- মনত্মব্য করে তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে সেমিনারের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। আগামী ৬ ফেবু্রয়ারি সিলেটে সেমিনারের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচী শুরম্ন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মার্চ মাসের মধ্যে এ কর্মসূচী শেষ হবে। সেমিনার সমন্বয় করতে প্রতিটি ভেনু্যতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে একজন প্রধান সমন্বয়কসহ কয়েকজন সমন্বয়ক নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দশটি গ্রম্নপ দায়িত্ব পালন করবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম জানান, তারেক রহমান ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন। সত্যিকারার্থে আগামী দুইমাসে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে তারেক রহমান রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। আর এসব ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনে যেসব সুপারিশ এসেছিল, তা চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। সেমিনারে এসব সুপারিশ সম্পর্কে বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নেয়া হবে। এই মতামতের ভিত্তিতে দলের ভবিষ্যত কর্মসূচী নির্ধারণ করা হবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সফলভাবে এ কর্মসূচী শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, সেমিনারে দলের নেতারা নয়, বুদ্ধিজীবীরা দলের নেতাদের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখবেন। তিনি এসব সেমিনারকে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের সুপারিশমালা মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা শীর্ষক সেমিনার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ভেনু্যর সেমিনারের তারিখ জানানো হলেও অপর ভেনু্যগুলোর তারিখ জানানো হয়নি।
ভেনু্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তালিকা:
রাজশাহী ভেনু্য :প্রধান সমন্বয়ক- মিজানুর রহমান মিনু, সমন্বয়ক-হারম্নন অর রশিদ, জয়নাল আবদিন ফারম্নক এমপি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং এ্যাডভোকেট রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
বগুড়া ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- এ্যাডভোকেট রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সমন্বয়ক- মিজানুর রহমান মিনু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা এমপি।
ঢাকা ও ময়মনসিংহ ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- আমানউলস্নাহ আমান, সমন্বয়ক- ফজলুল হক মিলন, এ্যাডভোকেট রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শরিফুল আলম এবং রশিদুজ্জামান মিলস্নাত।
খূলনা ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- আব্দুলস্নাহ আল নোমান, সমন্বয়ক- আমানউলস্নাহ আমান, মশিউর রহমান, এম ইলিয়াস আলী, নজরম্নল ইসলাম মঞ্জু এবং অধ্যৰ সোহরাব উদ্দিন।
যশোর ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- মশিউর রহমান, সমন্বয়ক- এম ইলিয়াস আলী, নজরম্নল ইসলাম মঞ্জু এবং অধ্যৰ সোহরাব উদ্দিন।
বরিশাল ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- সেলিমা রহমান, সমন্বয়ক- আমানউলস্নাহ আমান, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আহসান হাবিব কামাল, নজরম্নল ইসলাম রাজন, বিলকিস জাহান শিরিন এবং মাহবুবুল হক নান্নু।
সিলেট ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- এম ইলিয়াস আলী, সমন্বয়ক- খালেদা রাব্বানী, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন এবং রশিদুজ্জামান মিলস্নাত।
চট্টগ্রাম ভেনু্য: প্রধান সমন্বয়ক- মির্জা আব্বাস, সমন্বয়ক- গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোঃ শাহাজাহান এবং জয়নাল আবদিন ফারুক এমপি।
কক্সবাজার ভেনু্য : প্রধান সমন্বয়ক- গোলাম আকবর খোন্দকার, সমন্বয়ক- সালাউদ্দিন আহমেদ এবং লুৎফর রহমান কাজল এমপি।

No comments

Powered by Blogger.