চরাচর-বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস by জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

চাকা আবিষ্কারকে ধরা হয় মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারের একটি। শিকার বা রান্না করার নানা উপকরণ বয়ে বয়ে ঘুরে বেড়ানো একটা সময় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াল। তখন গোল চাকার ওপর ভর করে চলা বাহন মানুষের চলার পথ সহজ করে দিল।
আকাশে পাখি দেখে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় চিন্তা করল- পাখি উড়তে পারলে মানুষ কেন পারবে না! খেপাটে দুই ভাই ঠিকই আকাশে ওড়ার যন্ত্র তৈরি করে ফেললেন। ১৯০৩ সালে উইলবার রাইটের তৈরি উইলবার ফ্লায়ার নামের বিমানের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার। দুই বছর পর ১৯০৫ সালে উইলবার ফ্লায়ার-৩-এর গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ দশমিক ৯১ কিলোমিটার। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই লকহেড এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড বিমানের গতি কত দাঁড়ায় জানেন? ঘণ্টায় তিন হাজার ৫২৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। স্থলপথের তুলনায় আকাশপথের যান অনেক কম। এর পরও ভেবে দেখুন, স্বল্পগতির গাড়ি বা রেলগাড়িতে যদি মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, তাহলে ব্রেকহীন উচ্চগতির বিমানের অবস্থা কী দাঁড়ানো উচিত! অথচ তুলনামূলক অনেক কম দুর্ঘটনাই ঘটে আকাশপথে। এর কারণ হলো- আকাশপথের নীতিমালা। International Civil Aviation Organization (ICAO) নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পালন করে আসছে ১৯৪৪ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে। ১৯৯৪-এ আইসিএওর যখন ৫০ বছর পূর্তি হয়, তখন তারা ৭ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর দুই বছর পর জাতিসংঘ দিবসটির ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং কানাডিয়ান সরকারের সহযোগিতায় একে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য সচেতনতা ও সুরক্ষা। গতির সঙ্গে সঙ্গে যেন সেবার মানও উন্নত হয়, সে বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয় এই দিনে।
আইসিএও এখন একটি জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা, আন্তর্জাতিক ডাক যোগাযোগ সংস্থা ইত্যাদির সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে।
বাংলাদেশেও একটি বেসরকারি বিমান চলাচল সংস্থা আছে। এর নাম Civil Aviation Authority, Bangladesh (CAAB)। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক, সাতটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও ১৭টি বিমান নিয়ে সিএএবির কাজের পরিধি। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৩টি দেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে বিমান চলাচল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

No comments

Powered by Blogger.