খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা আজ বিশ বছর পার হয়ে গেলেও তার অবকাঠামোগত দিক থেকে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
এরপর ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সৃষ্টিলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত তার নিজস্ব গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ভিন্নধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও তার ঐতিহ্য ও সুনাম বজায় রেখে চলেছে। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে নিজেদের অনেকটা গর্ববোধ ও ভাগ্যবান মনে করি। দেশের একমাত্র রাজনীতি, সেশনজট, সন্ত্রাসমুক্ত এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে অবকাঠামোগত দিকসহ আবাসন সংকট সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি স্কুলের ১৯টি ডিসিপিল্গন ও একটি ইনস্টিটিউটের অধীনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এমনকি বেশ কয়েকটি ডিসিপিল্গনের অধীনে ডক্টরেট ডিগ্রি পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলগুলো হলো জীববিজ্ঞান স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল, সমাজবিজ্ঞান স্কুল, মানবিক ও কলাবিদ্যা স্কুল এবং চারুকলা ইনিস্টিটিউট। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনের বছরগুলোতে আরও কয়েকটি নতুন ডিসিপিল্গন চালু করার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে এখানে বিভিন্ন ডিসিপিল্গনের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার জন্য সবার জন্য আবাসন সুবিধা নেই। এখানে ছাত্রছাত্রীদের আবাসনের জন্য আছে মাত্র তিনটি হল। দুটি হল ছাত্রদের জন্য আর একটি ছাত্রীদের জন্য। এ তিনটি হলে প্রায় ১১০০ ছাত্রছাত্রী আবাসন সুবিধা পায়। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অধিক টাকা খরচ করে বাসা ভাড়া নিয়ে মেস করে থাকতে হয়। কিন্তু সেখানেও নানা রকম সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাচেলরদের অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে চায় না বা বেশি ভাড়া আদায় করে এসব ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে। তাছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের দ্বিতীয় বর্ষ বা তৃতীয় বর্ষ শেষ করার পর হলে সিট বরাদ্দ পায়। এতে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টিলগ্ন থেকে তিনটি হল প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও কর্তৃপক্ষ কখনোই পরিপূর্ণভাবে ছাত্রছাত্রীদের আবাসন সুবিধা দিতে পারেনি। এ বছর ২০১০-১১ সেশনে আরও প্রায় এক হাজার নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট সমস্যা চরমে রূপ নেবে এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন দুটি হল করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন কত দিনে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একনেক থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাজেট ঘোষণা করা হয়। এ বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনসহ আরও একটি নতুন ছাত্র হল এবং একটি নতুন ছাত্রী হল তৈরি অন্তর্ভুক্তি ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ সরকারের প্রায় আড়াই বছর ক্ষমতা পার হলেও নতুন দুটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর এখন পর্যন্ত স্থাপিত হয়নি। অথচ বিভিন্ন পত্রিকার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান অথবা তার মন্ত্রীরা নতুন নতুন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন। লেখাপড়ার সুন্দর পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় কি নেই? আসলেই কি আমাদের দেখার কেউ নেই?

হ শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.