ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অনলাইনের জয়জয়কার by মনোয়ারুল ইসলাম

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে দলে দলে ভিড় জমায় তরুণ-তরুণীরা । আসে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের দল।
ডিজিটাল এ মেলাজুড়ে দিনভরই ছিলো অনলাইনের জয়জয়কার। সব অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের অনলাইন সেবা দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরে। কোন্ প্রতিষ্ঠান কতোটা অনলাইনে সেবা দিতে পারে এটাই  যেন মেলার মূল প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে।

মেলায় এলে বেশ বোঝা যায়, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সেবা চালু হয়েছে, যেগুলো অচিরেই এ দেশের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। ভবিষ্যতের ডিজিটাল বাংলাদেশের এক ছোট্ট রূপেরই প্রদর্শনী যেন চলছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ এ ।

মেলায় অংশ নিয়েছে দেশি বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তরুণ শিক্ষার্থী ও আইসিটি প্রফেশনালদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সেমিনার, সম্মেলন ও কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। এগুলোতে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৩০ জন বক্তা অংশ নিচ্ছেন।

মেলা সাজানো হয়েছে তিনটি ভিন্ন প্রাঙ্গণে। মেলার মূল প্রাঙ্গণে রয়েছে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টল। বিআইসিসির বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে চলছে আইটি সেক্টরের সেমিনার। আর মূল হলের বাইরে দুই অস্থায়ী তাঁবুতে চলছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন স্টল। সব স্টলে ল্যাপটপে ও স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে নিজেদের অনলাইন সেবা।

তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক প্রায় ৬০টি বেসরকারি, ২৭টি মন্ত্রণালয় (বিভাগ) ও আন্তর্জাতিক স্টল এতে অংশ নিচ্ছে। আরো অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা, আইসিটি, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রতিরক্ষা, পানিসম্পদসহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পুলিশ, নির্বাচন কমিশন জরিপ অধিদপ্তরসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে মেলায়।

অংশ নিয়েছে রবি, বাংলালিংক, বিকাশ, ব্র্যাক, ইএটিএল অ্যাপস, স্টারহোস্টবিডি, প্রপার্টি বাজার, ডেভসটিম, ডিজিটাল সময়, স্যামসাংসহ বিভিন্ন আইটি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

সরকার কীভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজ ত্বরান্বিত করছে  তা দেখানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের স্টলগুলোও তৎপর।

তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীলতায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ওয়েবসাইট তাদের স্টলে নিজেদের তুলে ধরছে। নিজেদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা ও বিজ্ঞাপন সম্বলিত প্রচারপত্র ও কার্ড সবার হাতে দেওয়া হচ্ছে।

মেলায় সরকারি রেজিস্ট্রেশন বুথে গিয়ে জানা গেল, সরকারের নির্দেশে দেশের ৬৪ টি জেলা থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের এ মেলায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের প্রতিনিধি হিসেবে এডিসি লেভেলের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলা থেকে চারজন করে কর্মকর্তা এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। সবাই এখানে উপস্থিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন করছে।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিট্যান্ট প্রোগ্রামার আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, “সব জেলা থেকে এখনো সরকারি প্রতিনিধি আসেনি। তবে শনিবারের মধ্যে সবাই আসবে। এসব কর্মকর্তা জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল, প্রযুক্তি ও অনলাইনে সরকারি অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করবে।”

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ইভেন্টের ডেভসটিম স্টল থেকে  ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার নামের ৮০ পৃষ্ঠার  একটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে এই স্টলে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড শনিবার পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ মেলা খোলা থাকবে। এতে প্রবেশ করা যাবে বিনা মূল্যে।

‘সমৃদ্ধির জন্য জ্ঞান’ স্লোগানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) তিন দিনের এই  প্রযুক্তিমুখী বাংলাদেশ প্রদর্শনীর আয়োজক। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বেসিস, অ্যামটব, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং এবং আইএসপিএবি।

বৃহস্পতিবার ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়।

বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিনই মেলায় আসছেন আশা ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিফাত।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি কতোটা এগিয়েছে তা এ মেলায় এলে বুঝা যায়।”

তিনি বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে অনলাইন ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। তাই মেলায় প্রতিদিনই নতুন কিছু জানতে আসছি।”

তথ্যপ্রযুক্তির এই আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে তরুণদের আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.