সাদা হওয়ার দিন

দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। এ সময় হিমের রাজ্য উত্তর মেরুতে তাপমাত্রা আরও নামতে থাকে। কখনোবা তা হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানকার পশুপাখি যেন তখন এক বিশাল ডিপ ফ্রিজের ভেতর থাকে।
এর পরও দেখা যায়, সিন্ধুঘোটক ও সিলের মতো মেরু অঞ্চলের প্রাণীগুলো সাগরের বরফ-ভাসা জলে দিব্যি সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, ওদের শরীরে রয়েছে শীত ঠেকানোর ব্যবস্থা। সিন্ধুঘোটকের ইঞ্চি খানেক পুরু চামড়ার নিচে রয়েছে প্রায় ছয় ইঞ্চি পুরু চর্বির স্তর। এই চর্বি প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও সিন্ধুঘোটকের শরীর গরম রাখে।
হার্প সিলের শরীরেও রয়েছে শীত ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত চর্বির স্তর। ওরা এক ডুবে আধা ঘণ্টার মতো পানির নিচে থাকতে পারে। চর্বির জন্যই ওরা বরফগলা সাগরজলে সাঁতার কাটতে পারে। চর্বির ঢাল রয়েছে বলে সাদা মেরুভালুকও শীতকে পরোয়া করে না।
তবে শীত মৌসুম এলে উত্তর মেরুর কিছু প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় রংবদলের চমক। এর মধ্যে রয়েছে খরগোশ, খ্যাঁকশিয়াল, প্যাঁচা ও টার্মিগান নামের এক ধরনের পাখি এবং ক্যারিবু বলে পরিচিত এক জাতের বল্গা হরিণ। গরমকালে উত্তর মেরুতে যাওবা একটুখানি সবুজের দেখা মেলে, শীত মৌসুমে সব ঢাকা পড়ে শুভ্র বরফে। এ সময় ডাঙার এসব প্রাণীর মধ্যেও আসে পরিবর্তন। স্বাভাবিক রং বদলে সব একযোগে সাদা হতে থাকে। পুরো শীত মৌসুমে বরফের শুভ্রতায় যেন বিলীন হয়ে যায় ওরা। গরমকালে ওরা ফিরে যায় আগের রঙে।
গরমের সময় উত্তর মেরুর ধবল ধরায় থাকে প্রাণের স্পন্দন। বরফ গলে গিয়ে এখানে-সেখানে সবুজ বা হলদেটে সবুজ গাছগাছড়া গজায়। সেখানকার প্রাণীরা তখন স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে। এ সময় মেরু খরগোশের রং থাকে বাদামির মধ্যে কালচে ছোপ। এসব খরগোশ দেখতেও একটু অন্য রকম। মুখটা ওদের অন্য খরগোশের মতো লম্বাটে নয়, গোলগাল। কানও খাটো। কানের ভেতর বড় বড় রোম কনকনে বাতাস আটকে শরীরটাকে গরম রাখতে সহায়তা করে। শীত এলে খরগোশের রোমগুলো ধবধবে সাদা হয়ে যায়। আকারে একটু বড়ও হয় রোমগুলো। এই রং বদলের কারণে শুভ্র রাজ্যে শিকারি প্রাণীর কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে খরগোশ। ঠিক একই ব্যাপার ঘটে খ্যাঁকশিয়ালের বেলায়। সাদা শরীর নিয়ে এসব শিয়াল বরফের মধ্যে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। এতে নেকড়ের মতো হিংস্র শিকারি ওদের খুঁজে পায় না। আবার ছোটখাটো শিকার ধরার বেলায় এই শুভ্র-ছদ্মবেশ বেশ কাজে দেয়।
 শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, সূত্র: ওয়েবইকোয়েস্ট অনলাইন

No comments

Powered by Blogger.