অগ্নি-নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও ভবন অনুমোদন ছিল না তাজরিনের

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি তাজরিন ফ্যাশন্সের ‘অগ্নি-নিরাপত্তা ছাড়পত্র’ ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক ওই অগ্নিকাণ্ডের কমপক্ষে পাঁচ মাস আগে গত জুন মাসে তাজরিন ফ্যাশন্সের অগ্নি-নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়।
বার্তসংস্থা এপিকে এমন তথ্য দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। এদিকে তাজরিনের মালিক নিজে এপিকে বলেছেন,তিনি মাত্র তিন তলা ভবন তৈরি অনুমোদন নিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। অথচ সেখানে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে ৮ তলা ভবন নির্মাণ শেষ করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় চলছিল ৯ম তলা নির্মাণের কাজ। প্রকাশ হওয়া এসব তথ্য বাংলাদেশের ৪ হাজারের বেশি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ভঙ্গুরতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অথচ এসব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিই দরিদ্র বাংলাদেশের ৮০ ভাগ রপ্তানির উৎস।
নিজের তথ্য প্রকাশের কর্তৃপক্ষ না হওয়ায় নাম প্রকাশ না করা ওই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন,জুন মাসে তাজরিনের অগ্নি-নিরাপত্তা সনদের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু ভবনটির যথাযত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় কর্মকর্তারা পুনরায় একে নিরাপত্তা সনদ দিতে অস্বীকার করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন,এর চেয়ে বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তিনি জানিয়েছেন,যখন কোন কারখানার নিরাপত্তা সনদ কেড়ে নেয়া হয় তখন তাদেরকে সময় দেয়া হয় সমস্যা সমাধান করার জন্য। যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয় তখন ফায়ার বিভাগ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য মামলা করতে পারে। তবে খুব কম সময়েই এমন মামলা করা হয়ে থাকে। আর মামলা হলেও কারখানা বন্ধের মতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে না। আইনি লড়াইয়ে কর্তৃপক্ষ হেরে যায়। কারণ মালিকরা সাধারণত প্রভাবশালী হয়ে থাকে। তারা চাইলে সব কিছুই করতে পারেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এদিকে তাজরিনের মালিক দেলোয়ার হোসেন তিন তলার অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা করেও ৯ম তলার কাজ করতে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে নাম প্রকাশ না করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন কর্মকর্তা বলেছেন,তাজরিনের আইন ভঙ্গের বিষয়টি তারা জানতেন। তবে শক্তিশালী ইন্ডাট্রিজের বিরুদ্ধে না দাড়িয়ে কিছু না করার পথ বেছে নিয়েছেন তারা। অথচ কর্তৃপক্ষ চাইলে তাজরিনকে জরিমানা করতে পারতো। ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙ্গে ফেলার জন্য আদালতে মামলা করতে পারতো। ওই কর্মকর্তা অবশ্য জানান, আমাদের দুর্বলতা আছে। আমরা চাইলেও তেমন কিছু করতে পারতাম না। কেবল তাজরিন নয়,এমন অবৈধ কয়েকশ’ ভবন রয়েছে। এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন,দেশে অর্ধেকের বেশি গার্মেন্ট কারখানার যথাযত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নেই। এসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া উচিত। কিন্তু কে নেবে সে পদক্ষেপ। কোন সৎ সরকারী কর্মকর্তা এমন উদ্যোগ নিলে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। ফলে কেউ এমন ঝুঁকি নিতে চান না।

No comments

Powered by Blogger.