চতুর্থ ওয়ানডে আজ- ৩-১ না ২-২? by তারেক মাহমুদ

ক্রিকেটে শিশির-তত্ত্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু শিশিরের কারণে দিবারাত্রির ম্যাচ শুধুই দিনের ম্যাচ হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত কি আছে? না থাকলে সেটি দেখে ফেলার বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হয়ে যেতে পারত আজই।
দিবারাত্রির ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে শিশিরভেজা থাকে মাঠ। তাতে পরে বল করা দলকে সমস্যায় পড়তে হয়। বল ঠিকভাবে গ্রিপ করতে পারেন না স্পিনাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল অদ্ভুত আবদারটা করে বসল সে কারণেই। দিবারাত্রির পরিবর্তে আজকের চতুর্থ ওয়ানডেটি তারা খেলতে চাইল দিনে, মানে খেলা শুরু হতে হবে সকালেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে তো দলগুলোর ইচ্ছাতেই সব হয় না। টেলিভিশন সম্প্রচারকারীরা খেলা সম্প্রচারের জন্য আগে থেকে স্যাটেলাইট বুক করে রাখে বলে হুট করে এতটা সময় আগানো বা পেছানো কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দাবি তাই শুরুতেই উড়ে গেছে।
তবে দুই দলের সঙ্গে আলোচনা করে ম্যাচ রেফারি মাইক প্রক্টর বেলা আড়াইটার পরিবর্তে বেলা একটা থেকে খেলা চালানোর কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী পরশু রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করে সম্প্রচারকারীরা দেড় ঘণ্টা আগে থেকে খেলা সম্প্রচারের সব ব্যবস্থা করে ফেলার পর কাল আবার মত বদলে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত তাই আজ খেলা শুরু হচ্ছে বেলা আড়াইটা থেকেই।
ওয়ানডে সিরিজটা খুলনা থেকে ঢাকায় চলে আসার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমই প্রথম বলেছিলেন শিশির-সমস্যার কথা। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ভয়টাও স্পষ্ট। সুনীল নারাইন সবে জ্বলে উঠতে শুরু করেছেন। এ সময় বলটাই যদি ঠিকমতো ধরতে না পারেন, ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলবেন কীভাবে!
তৃতীয় ওয়ানডের অভিজ্ঞতা শিশিরের সঙ্গে স্পিনারদের গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে বাকি দুই ম্যাচে। উইকেটে লোভনীয় টার্ন আর বাউন্স দেখা গেছে স্পিনারদের জন্য। সেজন্য ক্যারিবীয়রা যেমন চেষ্টা করেছে নারাইনকে শিশিরমুক্ত রাখতে, তেমনি বাংলাদেশও দলে ভিড়িয়েছে বাড়তি স্পিনার। কাল বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানিকে অন্তর্ভুক্ত করায় বাংলাদেশের ১৪ জনের দলটা এখন হয়ে গেছে ১৫ সদস্যের। পেসার রুবেল হোসেনের জায়গায় আজ সানির খেলার সম্ভাবনা প্রবল। দলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা এই একটাই।
২-০-তে এগিয়ে যাওয়ায় সিরিজ না জেতা পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচই বাংলাদেশ দলের জন্য সিরিজ জয়ের ম্যাচ। ভারপ্রাপ্ত কোচ শেন জার্গেনসেন যে ম্যাচে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সটাকেই দেখছেন বড় করে, টস বা শিশির-টিশির নয়। কাল বিসিবির করিডরে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘অনেকেই টস নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু আমি মনে করি, বল আর ব্যাট হাতেই আমাদের ভালো করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচে সেটা পারলেও গত রাতে (পরশু) আমরা সেটা পারিনি। খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি।’
না পারার কারণ হিসেবে ঘুরেফিরে আসছে ২০-২৫ রানের আক্ষেপ। টিম মিটিং থেকে শুরু করে কাল ছুটির দিনে খেলোয়াড়দের আড্ডা সবখানেই ওই এক আফসোস। কিংবা টস জিতে যদি আগে বোলিং করা যেত! উইকেট দেখে বাংলাদেশ দলের নবীন সদস্যদের একজন এনামুল হকের তো এমনও মনে হয়েছে, আগে বল করলে ১৫০ রানের মধ্যে অলআউট করে দেওয়া যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
সেটা হয়নি, তবে বাকি দুই ম্যাচেও হবে না তেমন নয়। আর সেজন্য এখন আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অমঙ্গল কামনায় বসে যাওয়ার দরকার নেই। খুলনার দুই ম্যাচের জয়ের ব্যবধান বলে দিচ্ছে, নিজেদের ভালো খেলা দিয়েই এখন বাংলাদেশের পক্ষে হারানো সম্ভব বড় প্রতিপক্ষকে। বড় প্রতিপক্ষের খারাপ খেলাটাই একমাত্র শর্ত নয়। জার্গেনসেন চাচ্ছেন, প্রথম দুই ম্যাচের সব ইতিবাচকতা দিয়েই সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচে উজ্জ্বল হয়ে উঠুক বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে এ রকম বড় সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা যেহেতু খুব একটা নেই, প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়ার শঙ্কাও থাকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শিশির শুধু নয়, বাংলাদেশের একটা লড়াই তাই নিজেদের সঙ্গেও।

No comments

Powered by Blogger.