পদ্মা সেতু প্রকল্প: দুদকের খসড়া অনুসন্ধান প্রতিবেদন- ৩৮ কোটি টাকা ঘুষ, জড়িত ১০ জন by অনিকা ফারজানা

মাত্র ৩৮ কোটি টাকা নিয়ে ভাগাভাগি। এই টাকা মোট কাজের ১০ শতাংশ। এ অর্থই এসএনসি-লাভালিন কাজ পেতে ঘুষ হিসেবে দিতে চেয়েছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ ছয়জনকে। দরপত্র মূল্যায়নে দ্বিতীয় অবস্থান থেকে প্রথম স্থানেও চলে এসেছিল কানাডার এই কোম্পানি।
এর পরেই ঘটে বিপত্তি। গোপনে অভিযোগ যায় অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে। ফলে আর কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি এসএনসি-লাভালিনকে। বিশ্বব্যাংকের করা এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে শেষ পর্যন্ত ঘুষের লেনদেন হয়নি বলে দুদক একে বলছে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১০ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক।
দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে গত মঙ্গলবার দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ ও মীর মো. জয়নাল আবেদীন, উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও মীর্জা জাহিদুল আলম এ বিষয়ে খসড়া প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেন।
সরকারি ও কূটনৈতিক নানা সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেও জানা গেছে, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বিশ্বব্যাংক দিয়েছে, আবার দুদকও অনুসন্ধান করে পেয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা রমেশ শাহ, মোহাম্মদ ইসমাইল ও কেভিন ওয়ালেস বাংলাদেশে এসে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও সাবেক সেতুসচিবের সঙ্গে কাজ পাওয়ার জন্য একাধিকবার একান্তে দেখা করেছেন। এ বিষয়ে ওই সব কর্মকর্তার মনোভাব ছিল ‘অত্যন্ত আগ্রাসী’। দুদক এসব তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশে এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইপিসি) একাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার শুরুতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির বিষয়ে কানাডার রয়েল মাউন্টেইন পুলিশকে তথ্য দেয়। সেই সূত্রে কানাডিয়ান পুলিশ লাভালিনের কানাডার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কোম্পানির ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তা রমেশ শাহর হাতের লেখা একটি ডায়েরি জব্দ করে। যাতে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বাংলাদেশের ক্ষমতাবান কিছু লোকের নাম লেখা ছিল। সংশ্লিষ্ট একজন মন্ত্রীর নাম সংক্ষেপে লেখা হয় ‘এমআইএন’, সচিবের নাম লেখা হয় ‘এসইসি’ এবং প্রকল্প পরিচালকের নাম লেখা হয় ‘পিডি’ হিসেবে।
ডায়েরিতে লেখা তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পেতে হলে লাভালিনকে বাংলাদেশের ওই ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ ঘুষ দিতে হবে। ওই ১০ শতাংশের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
রমেশ শাহর ডায়েরিতে এ ধরনের তথ্য পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে কানাডার পুলিশ। একই সময় লাভালিনের অপর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইলকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।
বিভিন্ন জনের সংশ্লিষ্টতা: দুদকের খসড়া প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহর ডায়েরিতে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি মন্ত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায় এড়াতে পারেন না। তাঁর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক থেকেও লিখিতভাবে এই অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুদকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জনের জিজ্ঞাসাবাদে কেউ সরাসরি আবুল হোসেনের নাম উল্লেখ করেননি। তবে আকার-ইঙ্গিতে দু-একজন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে মামলায় আসামি করা হলে আরও শক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী সম্পর্কে খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সরকারের পক্ষে সেতু কর্তৃপক্ষের কেউ নন। অথচ তিনি সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এসএনসি-লাভালিন যাতে কাজ পায়, সে জন্য তিনি তদবিরও করেছেন। তবে এর সপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। রমেশ শাহর ডায়েরিতে তাঁর নামটিও আছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী ওরফে মুজিবুর সরকারি কাজে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নন। অথচ তিনি লাভালিনের পক্ষে দেনদরবার করতে সেতু ভবনে যাতায়াত করতেন। রমেশ শাহর ডায়েরিতে তাঁর নামও রয়েছে। এ ছাড়া তিনি লাভালিনের কর্মকর্তা ইসমাইলের কাছ থেকে একটি আমন্ত্রণের মাধ্যমে কানাডায় যাওয়ার ভিসা নিয়েছেন।
সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার প্রসঙ্গে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনানুগভাবে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারবার ভাঙা-গড়ার দায়দায়িত্ব অবশ্যই তাঁর ওপর বর্তায়। তিনি সেতুর পরামর্শক সংস্থার কাজ যাতে এসএনসি-লাভালিন পায়, সে জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। সেতু প্রকল্পের সাবেক সচিব রফিকুল ইসলামসহ অন্তত চারজন সাক্ষী তাঁর বিরুদ্ধে জোরালো সাক্ষ্যে বলেছেন, এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। অথচ এই অনুপযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দিতেই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারবার ভাঙা হয়। সেতুসচিবের সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির ইশারা-ইঙ্গিতে কাজটি করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান। তাঁরা সবশেষে গঠিত জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াদি মূল্যায়ন কমিটির কাছেও অনেক তথ্য গোপন করেছেন। রমেশ শাহর ডায়েরিতে সাবেক সেতুসচিবের নামও উল্লেখ রয়েছে।
দরপত্র মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কমিটির সদস্যসচিব কাজী ফেরদৌস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি কমিটির সব তৎপরতার খবর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গোপনে জানিয়ে দিতেন। এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ দিতে অশুভ তৎপরতার সঙ্গে তিনিও জড়িত ছিলেন। তিনি চার নম্বর কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও প্রথম বিবেচিত হওয়া হালক্রো নামের প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে কমিটিকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দরপত্র কমিটির সদস্য ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ জাবেরের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনিও লাভালিনের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করেছেন। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের পেছনে তাঁরও জোরালো ইন্ধনের প্রমাণ পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল।
এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাভালিনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এলে তাঁদেরকে মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করানোর কাজটি করেন মোস্তফা।
৬ নভেম্বর লিখিত বক্তব্যে মো. মোস্তফা অনুসন্ধান দলকে জানান, লাভালিনের মো. ইসমাইল বাংলাদেশে এসে নিক্সন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার একান্তে দেখা করেছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে। ইসমাইলের দায়িত্ব ছিল, যেকোনো উপায়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসএনসি-লাভালিনের কাজ পাওয়া। কিন্তু কারিগরি মূল্যায়নে কম নম্বর পাওয়ায় ইসমাইলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এ কাজের ভার দেওয়া হয় অপর কর্মকর্তা রমেশ শাহর ওপর।
রমেশ বাংলাদেশে এসে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর সাহায্য নেন। ইপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়। রমেশ শাহ সেতু ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় সেতু বিভাগের সাবেক সচিবও উপস্থিত ছিলেন। এরপর মন্ত্রীর সঙ্গে রমেশের মধ্যে প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হয়।
লাভালিনের তিন বিদেশি কর্মকর্তা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশে এসে মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী গ্রুপের সঙ্গে একান্তে দেখা করেছেন। তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লাভালিনের ওই তিন কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগটি প্রমাণিত। বাংলাদেশের বিচারিক আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিচার শুরু হলে কানাডার আদালতের রায়টি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যাঁদের অব্যাহতি: প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে মামলায় না জড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি কমিটির ভাঙা-গড়ার বিষয়ে জানতেন না। দরপত্র-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরুর এক বছর পর তিনি এতে ‘ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজার’ হিসেবে যোগ দেন। অভিযোগপত্রে তাঁকে সাক্ষী করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে সেতুসচিবসহ অন্যরা তৎপর ছিলেন। রফিকুল দুদককে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন কীভাবে হালক্রোকে সরিয়ে লাভালিনের পক্ষে কার্যাদেশ আদায় করা হয়েছে। তাই রফিকুল ইসলামকেও আসামির পরিবর্তে সাক্ষী করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
আইনি অবস্থান: পদ্মা সেতুর দুর্নীতির যড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং দুদক আইনে তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে কী ধরনের বিধান রয়েছে, তা-ও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, দুদক আইনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র বা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের কোনো সংজ্ঞা নেই। শুধু বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০ ধারা ও ৫১১ ধারা দুটি দুদক আইনের তফসিলে ১৭ নম্বর ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। দণ্ডবিধির যে ধারায় (১২০) এটি সংযোজন করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র আর দুর্নীতির ষড়যন্ত্র এক কি না, তা নিয়ে আইনগত বিতর্ক রয়েছে। দণ্ডবিধির ১২০(খ) ধারায় শাস্তির কথা বলা থাকলেও দুর্নীতির বিষয়ে কী কী ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধ করলে তা ষড়যন্ত্র হবে, সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। আর ৫১১ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ হয়েছে।
মামলার ধারা সম্পর্কে সুপারিশ: দুর্নীতির ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের জন্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(খ), দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দণ্ডবিধির ৫১১ ধারা, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও পরস্পর যোগসাজশে অপরাধ সংঘটনের জন্য দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা সংযোজনের সুপারিশ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.