বাঁচার তীব্র আকুতি ছিল দামিনীর

আমি বাঁচতে চাই- ভাই ও মায়ের কাছে এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন দামিনী। ধর্ষিত হওয়ার তিন দিন পর আপনজনের সঙ্গে প্রথম দেখাতেই বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা জানান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত পারলেন না। ১৩ দিনের লড়াই শেষে গতকাল শনিবার ভোরে তিনি মারা যান।
বাবা-মায়ের সঙ্গে দক্ষিণ দিল্লিতে থাকতেন দামিনী। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি উত্তর প্রদেশে। মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। সে আশাতেই শেষ সম্বল এক খণ্ড জমিও বিক্রি করে দেন তাঁরা। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটাতেই এ ব্যবস্থা। নিজেরা একবেলা কম খেতে রাজি ছিলেন, কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটাতে রাজি ছিলেন না। দামিনীর পরিবার সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের পত্রিকা স্ট্রেইটস টাইমস জানিয়েছে, 'তাঁরা খুবই সাধারণ ও সাদাসিধা মানুষ। মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মেয়েকে ধরে রাখতে পারলেন না।'
গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ফিজিওথেরাপির ছাত্রী দামিনী। বাসে থাকা ছয়জনের হাঁকডাকেই বাসে ওঠেন ২৩ বছরের দামিনী ও তাঁর বন্ধু। এর পরই চলন্ত বাসের ভেতরেই তাঁর ওপর নৃশংসতা চালায় ওই ছয়জন। এ সময় বন্ধু দামিনীকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারধর করে তারা। পরে তাঁদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে তারা চলে যায়। প্রসঙ্গত দিল্লির রাস্তায় বাসটির চলাচলের অনুমতিও ছিল না।
ধর্ষিত হওয়ার পর লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহননের ঘটনা ভূরিভূরি। কিন্তু দামিনী অন্যদের মতো মুখ লুকিয়ে থাকতে চাননি। বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর। ধর্ষণের পর এ লড়াইয়ের জন্য তাঁকে 'ব্রেভহার্ট' বলে অভিহিত করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। গুরুতর আহত অবস্থায়ও তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুইবার জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে ধর্ষণের ঘটনা এবং ধর্ষকদের বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। তাদের বিচারও দাবি করেন।
গণধর্ষণের এ ঘটনার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভও হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পরও ভারতজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি একটাই- সরকার যেন দোষীদের বিচার ও সাজা নিশ্চিত করে।
সিঙ্গাপুরে থাকা ভারতীয় হাইকমিশনার টিসিএ রাঘবান বলেন, দামিনীর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার শোকাহত। কিন্তু তাঁদের চাওয়া একটাই- দামিনীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হলেও ভারত যেন নারীদের জন্য নিরাপদ জায়গায় পরিণত হয়। যেন আর কারো জীবনে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। দামিনীর সেই বন্ধুর পরিবারও যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের উপযুক্ত বিচার চেয়েছে। সূত্র : পিটিআই, এএফপি।

১৬ : ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন দামিনী
১৩ : ধর্ষণের ১৩ দিন পর মৃত্যু
২২ : গড়ে প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন
৬৫০ : দিল্লিতে এ বছর ৬৫০টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে
১৮১ : ভারত সরকার নারীদের জন্য কাল সোমবার থেকে একটি হেল্পলাইন চালু করেছে। '১৮১' নম্বরে ফোন করে নারীরা তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটি পরিচালিত হবে
১৮ : গড়ে প্রতি ১৮ ঘণ্টায় দিল্লিতে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভারতে বড় শহরগুলোর মধ্যে দিল্লিতেই ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি

No comments

Powered by Blogger.