পূর্বাঞ্চল রেল ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা- নিয়োগে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত

নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে রেলের পূর্বাঞ্চলের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ছয়টি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানায় এবং রাজধানীর বনানী থানায় এ আটটি মামলা করেন দুুদকের কর্মকর্তারা।


বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দুদক জানায়, চটগ্রামের কোতয়ালি থানায় দায়েরকৃত ছয়টি মামলায় আসামি করা হয় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা, নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও পূর্ব রেলওয়ের অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান এবং সদস্যসচিব ও জ্যেষ্ঠ ওয়েলফেয়ার কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়াকে।
এদিন বেলা পৌনে ১২টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুর রেজা বাদী হয়ে মামলা ছয়টি দায়ের করেন। মামলার নম্বর ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রেলের পূর্বাঞ্চলের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের নম্বরপত্র ঘষামাজা করে অকৃতকার্য ব্যক্তিদের উত্তীর্ণ দেখিয়ে এবং উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ ও জেলা কোটা অনুসরণ না করে নিয়োগ কাজ সম্পন্ন করেন অভিযুক্তরা। ছয়টি ক্যাটাগরির নিয়োগে অনিয়ম এবং আর্থিক সুযোগসুবিধা নেয়ার প্রাথমিক তথ্য প্রমাণের ভিত্ততে এই তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকালে যদি অন্য কারও নাম বেরিয়ে আসে তাদেরও মামলার আসামি করা হবে বলে জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১০ সালে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। চলে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। টিকিট ইস্যুয়ার, সহকারী কেমিস্ট, সহকারী লোকোমাস্টার, ফুয়েল চেকার ও টুল কিপারসহ ছয়টি পদে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদক প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে তার প্রমাণও পায়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় নি। তাছাড়া পিলখানায় বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হওয়া ৭০ লাখ টাকার সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকার কোন সম্পর্ক দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়েনি।
এদিকে একই দিন সরকারী প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক লাইন ডিরেক্টর মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম খানসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলা নম্বর ১৯ ও ২০। রাজধানীর বনানী থানায় দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার নিলুফা জাহান ও মোঃ আল-আমিন বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অপর আসামিরা হলেন- স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক উপপ্রধান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান, প্রশিক্ষণ বিভাগের সহকারী প্রধান মোঃ মতিয়ার রহমান ও শরিফুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক জিএম তৌফিকুল ইসলাম এবং রফিকুল ইসলাম।
একটি মামলার এজাহারে বলা হয়, ডায়রিয়া সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক জাইকার অর্থায়নে একটি প্রকল্পে কাজ না করে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাত করেন অভিযুক্তরা। একই ব্যক্তিরা জাইকার আরেকটি প্রকল্প থেকে ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুইটি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
দুদকের সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক নুরুল হক, মনিরুজ্জামান, গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

No comments

Powered by Blogger.