মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ-দেশপ্রেম ও দক্ষতার উন্নতি হোক

বর্তমান মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই নানা কারণে ক্ষোভ ও অভিযোগ ছিল। সেসব কারণের মধ্যে ছিল কিছু মন্ত্রীর অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অকর্মণ্যতা। বেশি কথা কিংবা অবান্তর কথাবার্তা বলার অভিযোগে কিছু মন্ত্রী যথেষ্ট দুর্নামও কুড়িয়েছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে।


স্বাভাবিকভাবেই মানুষ মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল আশা করে আসছিল। দেশের শীর্ষস্থানীয় নাগরিকরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে দাবি তুলছিলেন কিংবা চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। এমনকি অনেক মন্ত্রীর প্রতি ক্ষমতাসীন প্রধান দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর যথেষ্ট ক্ষোভ ও উষ্মা রয়েছে। এর আগে দু-একজন মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য একজন মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তা যতটা না জনপ্রত্যাশার কারণে, তার চেয়ে বেশি বিশ্বব্যাংকের চাপের কাছে নতিস্বীকারের জন্য। একজন প্রতিমন্ত্রীও আত্মমর্যাদা রক্ষায় পদত্যাগ করেছেন, যা অনেকের কাছেই কাম্য ছিল না। ফলে বর্তমান মন্ত্রিসভা জনগণের আস্থা অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও প্রশাসনিক কাজে মন্ত্রীদের চেয়ে উপদেষ্টাদের বাড়াবাড়ি সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টির কারণ হয়েছে। তাই মহাজোট সরকারের শেষদিকে অর্থাৎ মেয়াদ বছরখানেক বাকি থাকতে গতকাল যে পাঁচজন নতুন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে, একে অনেকটা মন্দের ভালো বলা যায়। কারণ অযোগ্যতা ও অকর্মণ্যতার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে, যাঁদের কাজকর্মে মানুষ মোটেও সন্তুষ্ট নয়, তাঁরা কিন্তু মন্ত্রিসভায় থেকেই যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমন্ত্রণ পেয়েও দুজন মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অনাগ্রহই ব্যক্ত করেছেন, যা ব্যতিক্রমী ঘটনা।
দেশ পরিচালনায় মন্ত্রিসভার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংসদীয় ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সরকার পরিচালনা করে। তার পরও মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত দক্ষতা যেকোনো মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে, তার প্রমাণ বর্তমান মন্ত্রিসভায়ই রয়েছে। কৃষি ও শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি দেশের ভেতরে অনেক সুধীজনেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই তুলনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নিকট-অতীতের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়নি। আমরা আশা করি, সরকারের মেয়াদ অল্প হলেও মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা এ ঘাটতিগুলো পূরণে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে এবং মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হবেন। অন্যদিকে এটিও মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ বিশাল মন্ত্রিসভার বোঝা বহন করতে করতে যেন ন্যুব্জ না হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন এমন মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। তাতে রাষ্ট্রের খরচ বাঁচবে, কাজের চেয়ে অকাজ কম করার প্রবণতা ও পরিমাণ এবং সর্বোপরি সরকারের ভাবমূর্তির সংকট সৃষ্টির পরিমাণও কিছুটা কমবে।
কথায় আছে, যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ। আমাদের জানা মতে, মন্ত্রিসভায় যাওয়ার আগে একজন সৎ মানুষ হিসেবে যাঁদের যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর অনেক অসৎ কাজের অভিযোগ উঠেছে। আমরা আশা করি, মন্ত্রিসভার নবাগত সদস্যরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকবেন। কারণ এ দেশের মানুষ আর রাবণ দেখতে
চায় না।

No comments

Powered by Blogger.