শপথ নিলেন পাঁচ মন্ত্রী দুই প্রতিমন্ত্রী-দপ্তর বণ্টন আজ-কালের মধ্যে

সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে মন্ত্রিসভায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হলেন পাঁচজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী। পাঁচ মন্ত্রীর মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজনের পাশাপাশি আছেন মহজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।


আওয়ামী লীগের চারজন হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, জাতীয় সংসদের হুইপ ও কুমিল্লা ১১-এর সংসদ সদস্য মুজিবুল হক, দিনাজপুর ৪-এর সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং যশোর ২-এর সংসদ সদস্য মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী এবং ঝিনাইদহ ১-এর সংসদ সদস্য মো. আবদুল হাই। শপথ গ্রহণকারী সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে তিনজন সাবেক আমলা। মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাবেক সিএসপি ও সরকারের সচিব ছিলেন। দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ এইচ মাহমুদ আলী পেশাগত জীবনে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্বও পালন করেছেন। মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ছিলেন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রীদের শপথ পড়ান। শপথে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য, মহাজোট নেতারা ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে শপথ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েও মহাজোট মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তাঁদের দুজনের পরিবর্তে শেষ মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মোস্তফা ফারুখ মোহাম্মদ।
শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে এসে তাঁদের সালাম জানান। তাঁদের মধ্যে মুজিবুল হক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। তবে গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়নি। নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টনের পাশাপাশি অনেক মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হবে বলেও জানা গেছে। আজ অথবা কালকের মধ্যে এই রদবদল হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্রে জানা গেছে। চতুর্থ দফা এই পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে মহাজোট মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়াল ৫১তে।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভার রুটিন কাজের অংশ হিসেবেই এতে নতুন সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
নতুন মন্ত্রীদের কয়েকজনকে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে; সরকারের মন্ত্রীরা আন্তরিকভাবে কাজ করার ফলেই এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে হাসানুল হক ইনু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেও চ্যালেঞ্জ কঠিন হবে না, যদিও দায়িত্বটা গুরু। তবে প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় মুজিবুল হক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং নিজ এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়েছেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাজের সুযোগ আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে 'আনন্দিত' হয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই বলেন, 'যে সময়ের জন্য এ দায়িত্ব পেয়েছি, সেই পর্যন্ত দেশের কাজ করে যেতে চাই।'
মন্ত্রিসভার এ রদবদলের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহাজোট মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ পরিবর্তন আসে গত বছরের ২৮ নভেম্বর। সে সময় মন্ত্রিসভায় যোগ হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন হাছান মাহমুদ।
চতুর্থবারের এই পরিবর্তনের আগে মন্ত্রিসভার আকার ছিল ৪৬ জনে। কিন্তু এর মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ান। এর আগে সরকারের প্রথম দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং আটজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর ১৮ দিন পর ২৪ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা প্রথমবারের মতো সম্প্রসারণ করা হয়। ওই দফায় ছয়জন প্রতিমন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর ওই বছরের ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ছয়জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে একজন পূর্ণ মন্ত্রী। বাকিরা প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সাতজন উপদেষ্টা রয়েছেন।
সাংবিধানিকভাবে বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদ আছে ১৩ মাস। আগামী বছরের ২৫ অক্টোবর এ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর ৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকার গঠিত হয়। সেই হিসাবে সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তবে সাংবিধানিকভাবে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে, যারা নির্বাচন পরিচালনা করবে।

No comments

Powered by Blogger.