মেনন যে কারণে মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি

মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ওয়ার্কার্স পার্টি তথা ১৪ দলের কোন পরামর্শ না নেয়ার ক্ষোভ থেকেই মন্ত্রিপরিষদে যোগ দেননি রাশেদ খান মেনন। দলীয় সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ না নেয়ার ঘোষণা দেন।


দলের ১৪ সদস্যের পলিটব্যুরোর জরুরী সভায় বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা মন্ত্রিপরিষদে যোগ দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন তাঁরা। তবে সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকারকে সমর্থন জানাবে দলটি।
১৪ দলের অন্যতম শরিক দলের নেতা রাশেদ খান মেনন। মহাজোটের একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। এর সুবাদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের বিরোধিতা করে সংসদের ভেতরে বাইরে সমালোচনায় মুখর ছিলেন এই নেতা। পাশাপাশি নিজ দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারাও ১৪ দল থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানিয়ে আসছিলেন অনেক দিন আগে থেকেই। এর পরও সর্বশেষ বর্তমান সরকারের এক বছরের কিছু সময় বাকি থাকতে মন্ত্রী হওয়ার ডাক আসে তাঁর। মন্ত্রিপরিষদে যোগ দিতে ব্যক্তিগত মতামত অনেকটা ইতিবাচক থাকলেও সর্বশেষ দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটাতে পারেননি তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মেনন। ১৯৭৯, ৯১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে। বুধবার রাতে মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দলের দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলন এবং এর প্রেক্ষিতেই নির্বাচনেরই ফল। এই ধারাবাহিকতায় মহাজোট সরকারে চৌদ্দ দলের শরিক হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু সরকার মন্ত্রিসভা গঠনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার কোন ক্ষেত্রেই ওয়ার্কার্স পার্টিসহ চৌদ্দ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অথবা আওয়ামী লীগের এ যাবত কোন আলোচনা হয়নি এবং অংশগ্রহণও ছিল না।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে চৌদ্দ দলকে সক্রিয় করার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ফল আসেনি। সাম্প্রতিক এই ক্ষোভ থেকে ১৪ দলের শরিক নেতৃবৃন্দ পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠকে মহাজোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের ক্ষোভসহ দাবিদাওয়ার কথা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। শরিক দলগুলোর বৈঠকের প্রেক্ষিতে টনক নড়ে আওয়ামী লীগের। শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কয়েক শীর্ষ নেতা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় শরিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। কিন্তু এই সিদ্ধান্তও অল্প সময়ের মধ্যেই ভেস্তে যায়।
সরকারের সঙ্গে শরিক দলগুলোর টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির যোগদানের আর কোন অবকাশ নেই বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারের প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং একইভাবে চৌদ্দ দলসহ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে বিএনপি-জামায়াতসহ দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পলিটব্যুরো সদস্যরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিসভায় যোগদান করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় মেননকে মন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চৌদ্দ দল তথা মহাজোটের ঐক্য অটুট থাকবে। এই গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্য মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে এগিয়ে নেবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস, কামরুল আহসান, ফজলে হোসেন বাদশা, নূরুল হাসান, ইকবাল কবির জাহিদ, মনোজ সাহা, আনিসুর রহমান মল্লিক ও নূর আহমেদ বকুল। বৈঠকে ১৪ দলের পলিটব্যুরো সদস্যের মধ্যে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.