নতুন মন্ত্রীরা মাঠের শেষ সময়ের খেলোয়াড়

মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংসদে বরণ করা হলো সদ্য নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীদের। বেশিরভাগ এমপিই তাদের শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানিয়েছেন। কিছু এমপি রসিকতাও করেছেন।

অনেকে এসব মন্ত্রীদের ফুটবল মাঠের শেষ সময়ের খেলোয়াড় বলে মন্তব্য করেছেন। সদ্য মন্ত্রীত্ব পাওয়া কয়েকজন এমপির এসব রসিকতার সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান নতুন শপথ নেওয়া প্রত্যেক মন্ত্রীকেই তাদের আসনের পাশে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শপথ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে এসে যোগ দেন জাসদের হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আব্দুল হাই, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, ওমর ফারুক চৌধুরী, মুজিবুল হক।

এর মধ্যে হাসানুল হক ইনু দলীয় পতাকা গলায় ঝুলিয়ে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে অনেক এমপির সঙ্গে করমর্দন করেন। আবার অনেকে তার আসনের পাশে এসে অভিনন্দন জানান। অপর দুই মন্ত্রী তাদের আসনে বসলে অনেক এমপি তাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। হাস্যোজ্জলমুখে তারাও এর প্রত্যুত্তর দেন।

তবে সবচেয়ে বেশি হাস্যজ্জ্বোল দেখা গেছে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া মুজিবুল হককে।

এদিকে অধিবেশনের শুরুর দিকে অধিবেশন কক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন মন্ত্রীত্বের পদ প্রত্যাখানকারী তোফায়েল আহমেদ। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর তিনি অধিবেশনে কক্ষে আসেন। আসার পর প্রথমে নিজের আসনে না বসে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের পাশে বসেন। পরে তিনি সামনের সারিতে নিজ আসনে গিয়ে বসেন। এ সময় অনেক বেশ কয়েকজন এমপি তার সঙ্গে কথা বলেন।

এর কিছু সময় পর সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন। প্রতিদিন তাদের মধ্যে মাঝে মধ্যে হালকা কথা হলেও আজ তা হয়নি। তোফায়েল আহমেদ বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকালেও প্রধানমন্ত্রী ফাইল পড়া ও স্বাক্ষর করতে ব্যস্ত ছিলেন।

ওদিকে মন্ত্রীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া অপর নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন সংসদে আসেননি। এছাড়া অনুপস্থিত ছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

মাগরিবের নামাজের বিরতির পর এমপিদের লবি ও সংসদ সচিবালয়ের ক্যান্টিনে নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে সরগরম আলোচনা হয়।

নরসিংদী থেকে নির্বাচিত দুই এমপি জানান, হুইপ মুজিবুল হকের কাছে মন্ত্রীত্ব পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা হলাম ফুটবল মাঠের শেষ দিকের খেলোয়াড়। আমাদের লক্ষ্য  গোল দেয়া।

কিভাবে সম্ভব এমপিদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে ম্যারাডোনা ও রোনালদো এমনকি জিনেদিন জিদান ম্যাচের শেষ দিকে মাঠে এসে দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন। আমরাও সেই চেষ্টা করবো।

অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, সরকারের শেষ দিকে এসে যাদের মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আসলে কাজের কাজ কিছুই করতে পারবেন না। উল্টো এ নিয়ে সরকারকে হয়তো নতুনভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের বাইরে এসব মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন তাদের শুভাকাংখীরা। মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে শুভেচ্ছা জানাতে কচুয়া থেকে এসেছিলেন, আওয়ামী লীগ কর্মী তারেক আহসান। তিনি বলেন, গতকাল খবর পেয়েই আজ সকালে ছুটে এসেছি। কিন্তু এসে শুনলাম উনি সংসদে আসেননি। তাই এখন যাচ্ছি বনানীর বাসায়।

একইভাবে ঝিনাইদহ থেকে মাইক্রো ভাড়া করে এসেছেন জুয়েল মাহমুদের নেতৃত্বে বেশ কয়েক স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী। তারা বলেন, নেতা কবে এলাকায় যাবেন সে অপেক্ষায় না থেকে সংসদে চলে এসেছি তাকে শুভেচ্ছা জানাতে।

ওদিকে সংসদের বাইরেও বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে অপেক্ষা করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ নেতা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমীর হোসেন আমুর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি ‘টু ডে নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে যান। একইভাবে অন্যান্য নেতারাও তার পথ অনুসরন করেন।

No comments

Powered by Blogger.