স্মরণ-'জীবন এত ছোট ক্যানে'র তারাশঙ্কর by জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

যাঁরা জীবনের কথা বলেন, তাঁরাই স্বল্পায়ু নিয়ে আক্ষেপ করেন। কচ্ছপের নিষ্ক্রিয় দীর্ঘ জীবন অথচ মানুষের কর্মময় আয়ু নিয়ে আক্ষেপ করেন তাঁরা। এই আক্ষেপ কিন্তু নতুন নয়, বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের অমূল্য একটা লাইন- 'জীবন এত ছোট ক্যানে।'


যিনি মাত্র চারটি শব্দের মাধ্যমে এমন শক্তিশালী কথা বলতে পারতেন, তাঁর নাম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামের জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা প্রভাবতী দেবী। ১৯১৬ সালে লাভপুরেরই যাদবলাল হাই স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি কংগ্রেসের কর্মী হয়ে সমাজসেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। তিনি একবার ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে একবার জেল খাটেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাহিত্যকর্মে নিজেকে জড়ানোর। ১৯৩২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো শান্তিনিকেতনে যান রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'চৈতালী ঘূর্ণি' প্রকাশিত হয় ওই বছর। ১৯৪০ সালে কলকাতায় একটি বাড়ি করে তিনি পরিবারসহ চলে আসেন। সারা জীবন তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন সভা-সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি যান সরকারি সফরে। পরে রাশিয়াও ঘুরে আসেন। ১৯৫৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান। ১৯৬২ সালে তিনি পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। তারাশঙ্কর জমিদারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেও সারা জীবন লিখে গেছেন সাধারণ মানুষ নিয়ে। বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম ও ডোমদের কথা তাঁর লেখায় পেয়েছে স্বকীয়তা। গ্রামজীবনের ভাঙনের গল্প, শহুরে জীবনের উত্থান- সবই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পের বই, ১২টি নাটক, চারটি আত্মজীবনী এবং দুটি ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। ১৯১৬ সালে তিনি ঊমাশশী দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন। তিনি লিখেছিলেন, 'এই খেদ মোর মনে/ভালোবেসে মিটল না আশ কুলাল না এ জীবনে/হায়! জীবন এত ছোট ক্যানে/এ ভুবনে?
এত ছোট জীবন নিয়ে এসেও তিনি অমর হয়ে আছেন বাংলা সাহিত্যে।

জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

No comments

Powered by Blogger.