পোশাক শিল্পে অস্থিরতা-ত্রিপক্ষীয় আলোচনাতেই সমাধান

বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে দুই বছর পর তৈরি পোশাক শিল্প আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানায় হামলা এবং যানবাহন ভাংচুরের মুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে আশুলিয়া এলাকার সব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতির তেমন লক্ষণ নেই।


অনেক স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। মালিক-শ্রমিক এবং সরকারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের প্রধান এ উৎসে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, এমন শঙ্কা অমূলক নয়। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লাখ লাখ নারী শ্রমিক। মালিক, শ্রমিক বা সরকার কারও জন্যই এ পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। তৈরি পোশাক শিল্পে ৩০-৩৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যাদের প্রধান অংশই নারী। এ খাত থেকেই আসে রফতানি আয়ের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ। আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও পড়বে বিরূপ প্রভাব। এ শিল্পের সঙ্গে শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাও নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই এ বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা চাই। দ্রব্যমূল্য ও বাড়ি ভাড়াসহ নানাভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে শ্রমিকদের দিক থেকে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি ওঠা স্বাভাবিক। দুই বছর আগে পোশাক শিল্পে বেতন বাড়ার আন্দোলন জোরালো হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন, এ শিল্পের শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হয় তা 'অপর্যাপ্ত ও অমানবিক'। প্রধানত তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মালিকরা সে সময় তাদের প্রস্তাবিত নূ্যনতম মজুরি আরও ৫০০ টাকা বাড়াতে সম্মত হয়েছিলেন। গত দুই বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় যথেষ্ট বেড়েছে এবং মালিকরা সেটা বিবেচনায় নেবেন বলেই আমরা আশা করব। তবে উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, সেটাও সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে। ইউরোপের দেশগুলো হচ্ছে আমাদের পোশাকের প্রধান ক্রেতা। সেখানে মন্দা চলায় আমাদের পোশাক রফতানিতে প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় মালিকরা কিছুটা চাপের মধ্যেই রয়েছেন। আমরা মনে করি, উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই একটা নিষ্পত্তিতে পেঁৗছানো জরুরি। এ শিল্প একদিন বন্ধ থাকলে শ্রমিক-মালিক কারোরই লাভ নেই। আমরা আশা করব, মালিকপক্ষ সহনশীল হবেন এবং শ্রমিকরাও আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে যে কোনো ধরনের হঠকারিতা পরিহারে যত্নবান থাকবেন। এ ক্ষেত্রে গঠনমূলক ধারায় ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার প্রদানও গুরুত্বপূর্ণ। এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্ববাজার চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ। যে বাজারে আমাদের পণ্য যায়, সেটা দখলে নেওয়ার জন্য একাধিক দেশ উদগ্রীব হয়ে আছে। একবার বাজার হারালে সেটা ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এটাই অভিজ্ঞতা।
শ্রমিকদের আন্দোলন জোরালো হলে তার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রয়েছে কি-না সে প্রশ্ন ওঠেই। বিদেশি চক্রান্তের প্রতিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব দেশ আমাদের প্রতিযোগী, তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। এ বিষয়ে সরকারকেই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। শ্রমিক-মালিকরাও সাবধান থাকবেন যেন তাদের বিরোধের সুযোগ নিয়ে কেউ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত এ শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.