অরণ্যে রোদন-কিছু না পাওয়ার চেয়ে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়া ভালো by আনিসুল হক

জামালের মা কারওয়ান বাজারে পিঠা বিক্রি করতেন। তার বাবা একজন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য সুন্দর ঢাকা গড়ে তোলার স্বার্থে জামালের মায়ের ফুটপাতের পিঠাঘর উচ্ছেদ হয়ে যায়। জামালের বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে।


অগত্যা জামালের মা তাঁর নয় বছর বয়সী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলপড়ুয়া জামালকে নিয়ে কুড়িগ্রামের উজানপুর চরে চলে যান। সেখানে একটা পর্ণকুটিরে জামালের দাদি থাকেন। বৃদ্ধা দাদি কী খাওয়াবেন এই ছোট্ট ছেলেটিকে? এক রাতে তাঁদের ভাত জোটে না, তাঁরা শালুকসেদ্ধ খেয়ে শুয়ে পড়েন। মাঝরাতে মা দেখেন, জামাল কাঁদছে। মা আতঙ্কিত হন, এই বুঝি জামাল ভাত চেয়ে বসে। আসলে জামাল কাঁদছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন দেখেছে, ইন্ডিয়ার কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হেরে যেতে বসেছে। এটা এখন সে মাকে বলতেও চায় না। বলে ফেললে যদি স্বপ্নটা সত্যি হয়। সে তখন মাকে বলে ক্ষুধার কথা। একটু পর বলে, ‘মা, তোর সবুজ শাড়িটা কাইটা আমারে একটা পতাকা বানায়া দিবি। লাল গেঞ্জিটা কাটলেই তো সূর্যটা হইব।’ মা আশ্বস্ত হন যে ছেলে ক্ষুধার কথা ভুলে গেছে।
আমার লেখা এই গল্পটা ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর একুশে ফেব্রুয়ারির ক্রোড়পত্রে। এটা গল্পই, কিন্তু সত্যি সত্যি যে কারওয়ান বাজারের পিঠার দোকান, চায়ের দোকানগুলো ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা মিথ্যা নয়। আর ভবঘুরেদেরও যে ধরে নিয়ে রাখা হয়েছে ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে, সে খবরও আমরা পত্রিকায় পড়েছি। আমাদের এত ভালোবাসার ক্রিকেট উৎসব কারও কারও জীবিকার ওপর হাত দিয়েছে, তা তো স্পষ্টই। তবু আমরা কোনো প্রতিবাদ করছি না। কারণ, আমরা ক্রিকেট ভালোবাসি। আমাদের খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা আর পাতা কুড়ানির দলেরও যে প্রিয় খেলা ক্রিকেট, প্রিয় মানুষ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা।
নয় বছরের ছোট্ট জামাল যে দুঃস্বপ্ন দেখেছিল, তারও চেয়ে বড় দুঃস্বপ্নের দিন একটা গেছে আমাদের ওপর দিয়ে। ৪ মার্চ ২০১১। ওই দিন বাংলাদেশ উন্মুখ হয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাবে বলে। কিন্তু জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ওই খেলায় বড় হয়ে উঠেছে এক আকস্মিক বজ্রপাত। মাত্র ৫৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংস গুঁড়িয়ে যাবে, এটা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি আমরা।
দর্শকদের মধ্যে যাঁরা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন, তাঁদের মর্মবেদনা আমরা বুঝি। অনেকেই টিকিটের জন্য দুই দিন দুই রাত ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর হয়তো পেয়েছেন টিকিটের রসিদ। সেই রসিদ নিয়ে আবার যেতে হয়েছে টিকিটের জন্য। সেখানেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। সেই সোনার হরিণ টিকিট জোগাড় করে কত উৎসাহ-উদ্দীপনা বুকে নিয়ে তাঁরা স্টেডিয়ামে গেছেন। তাঁদের গায়ে লাল-সবুজ, কেউ সঙ্গে নিয়েছেন ব্যাঘ্রমূর্তি, কেউ বা মুখেই বাঘের মুখোশ এঁকে নিয়েছেন। আমার সঙ্গে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দেখা হয়েছে দুজনের—একজন এসেছেন নিউইয়র্ক থেকে, একজন শিকাগো থেকে। তাঁরা সবাই দেশে এসেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে সমর্থন জানানোর জন্য। আমি নিজে তিনটা টিকিট প্রায় ৩৩ হাজার টাকা খরচ করে কিনে সপরিবারে গিয়েছি স্টেডিয়ামে। ১১ হাজার টাকার টিকিট, কিন্তু এর আগের ম্যাচটা যে ৭০০ টাকার গ্যালারিতে দেখেছি, গ্যালারিটা তারই মতো, শুধু আগের দিন মাথার ওপরে একটা ছাদ পেয়েছিলাম, এটা গনগনে সূর্যের নিচে, কোনো ছাদও নেই। একটা নৈশভোজ পাওনা ছিল, সেটাও পাইনি, পেলেও গলা দিয়ে নামত না। এই টিকিট তিনটা কেনার জন্যও আমাদের তিনজন কর্মী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়েছিলেন।
হার তো হার, তাই বলে ৫৮! এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টের। খুবই। কিন্তু তার পরও দর্শক হিসেবে, ক্রিকেট খেলুড়ে জাতি হিসেবে আমাদের পরিপক্বতার পরিচয় দেওয়া উচিত। এমন না যে আমাদের এই কষ্ট সাকিব আল হাসানরা বুঝতে পারেন না। কেউ কেউ তা-ই ভাবেন, বলেন, ওঁরা তো হাসছিলেন। হাসছিলেন তো বোকা হয়ে গিয়ে, ধকলটা সামলাতে না পেরে। ওঁরা নিজেরাই কি বুঝছেন না, কী প্রলয়ংকরী ঝড়টা ওঁদের ওপর দিয়ে গেছে! বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রথম আলোর (৯ জানুয়ারি ২০১১) স্টেডিয়াম পাতায় প্রকাশিত উৎপল শুভ্রর নেওয়া সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো আছে। একটা টিকিটের জন্য ব্যাংকের সামনে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কষ্ট করছে, এই দৃশ্যটা তিনি নিজের চোখে দেখতে ব্যাংকের সামনে গিয়েছিলেন। উৎপল শুভ্রর প্রশ্ন, ‘কী হলে বলবেন, ভালো রেজাল্ট হয়েছে?’ সাকিবের উত্তর, ‘সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করা।’ তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘আমার কী মনে হচ্ছে জানেন, আমাদের সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করাটাই কঠিন। এটি করতে পারলে সব ইজি হয়ে যাবে।’ সাক্ষাৎকারের এই অংশ আমি আমার লেখা ‘বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে’ শীর্ষক অরণ্যে রোদন কলামে (১১ জানুয়ারি ২০১১) উদ্ধৃত করেছিলাম।
‘বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে’ শুনে হয়তো আপনি বলতে পারেন, আপনারাই তো আশার কথা বলে বলে মানুষকে আকাশে তুলেছেন। সে কারণেই ক্ষুব্ধ মানুষ স্টেডিয়ামে চার-ছয় লেখা কাগজগুলো ছুড়ে মেরেছে, এমনকি ঢিল ছুড়েছে খেলোয়াড়দের গাড়িতে আর সাকিব আল হাসানের বাসায়। একটু দাঁড়ান। আমি বারবার করে একটা কথাই লিখেছি, সেটা হলো, খেলার ফল আমাদের হাতে নয়, কিন্তু একটা জিনিস আমাদের হাতে; আর কেবল সেটাতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি; তা হলো দর্শকদের সংযত আচরণ। আমার একটা আশঙ্কা সব সময়ই ছিল, স্বাগতিক হিসেবে আমরা যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিতে পারব তো? এ হচ্ছে সেই দেশ, যে দেশে কোনো গাড়ির নিচে একজন যাত্রী চাপা পড়লে ১০টা গাড়ি নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয়। তাই আমি এই বছর ক্রিকেটবিষয়ক প্রতিটি লেখায় দর্শকদের প্রতি একটা আহ্বানই বারবার জানিয়েছি, আসুন, দর্শক হিসেবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। এটা আমাদের হাতে। নিজের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিই, ‘একটা জায়গায় আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, যদি স্বাগতিক দেশ হিসেবে আমরা আমাদের হূদয়ের দরজাটা সারা পৃথিবীর জন্য খুলে রাখি। আমাদের দল হারুক (তা যেন না হয়) বা জিতুক, আমরা পৃথিবীর সভ্যতম জাতির মতো আচরণ করব। আমরা বিদেশি অতিথিদের সম্মান জানাব, ভালোবাসা দেখাব। পথেঘাটে, স্টেডিয়ামে, হোটেলে, রেস্টুরেন্টে, বিপণিবিতানে তাঁদের হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানাব, তাঁদের সহযোগিতা করব। আমরা সেই ভারতীয় বা পাকিস্তানি সমর্থকদের মতো হব না, দল হেরে গেলে যারা খেলোয়াড়দের বাড়ি গিয়ে চড়াও হয়। বরং এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাই হতে পারে আমাদের অনুসরণীয়, তারা ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ, কিন্তু ভোলে না যে ক্রিকেটটা একটা খেলাই।’ (অরণ্যে রোদন, প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি ২০১১)
৪ মার্চ সন্ধ্যায় ভীষণ মুষড়ে পড়ে বিছানায় শুয়ে আছি। নিজের মনকে বারবার বলছি, ক্রিকেটে এটা হতে পারে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয়, যারা ব্যাটিংয়ে এত খারাপ করেছে। সবচেয়ে কম রানে আউট হওয়ার রেকর্ড জিম্বাবুয়ের—৩৫, ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ৪৩, ১৯৯৩ সালে। ভারতের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড হলো ৫৪, শারজায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ২০০০ সালে। আর বিশ্বকাপে পাকিস্তান যেবার ইংল্যান্ডের কাছে ৭৪ রানে অলআউট হয়েছিল, সেবারই তারা ইংল্যান্ডকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে (১৯৯২)। এসব বলে সান্ত্বনা খুঁজছি নিজের ভেতর, তখনই পেলাম সেই দুঃসংবাদটা। ক্রিস গেইল টুইটারে লিখেছেন, তাঁদের বাসে ঢিল পড়েছে। তাঁরা বাসের মধ্যে শুয়ে পড়েছেন। এরপর কী? বুলেট! তিনি এই দেশে আর এক মুহূর্ত থাকতে চান না। ৫৮ রানে ১০ উইকেট পড়ায় যে ক্ষতি হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের গাড়িতে একটা ঢিল পড়ায়। আমার বুকটা ভেঙে এল। আমি যে দর্শকদের আচরণ দিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে চেয়েছিলাম, আমার বাংলাদেশের আর চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না!
তবু এই দেশে উন্মত্ত মানুষ যেমন কিছু আছে, তেমনি বিবেকবান মানুষও আছে প্রচুর। খুব ভোরবেলা ফুল আর ব্যানার নিয়ে বাংলাদেশের একদল মানুষ গিয়েছিলেন খেলোয়াড়দের হোটেলের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তখন হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দরের দিকে। ব্যানারে লেখা, ‘আমরা দুঃখিত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ তাঁদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় সেই ছবি তুলে নিয়েছেন। আমার বুক থেকে একটা ভারী পাথর যেন নেমে গেল।
এবার আমার ক্ষমাপ্রার্থনার পালা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কাছে। আমাদের দেশটা গরিব, প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নয়। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর সংগঠন ও বাঙালি বইয়ে লিখেছিলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে আমরা যে সাফল্য পাই না, তার কারণ আমাদের হীন স্বাস্থ্য। অপুষ্টির দেশ, রোগ-ব্যাধির দেশ। যেসব ক্ষেত্রে শারীরিক বল তেমন দরকার হয় না, যেমন—দাবা, সেসব ক্ষেত্রে হয়তো আমরা ভালো করতে পারি। যেমন—আমাদের ভালো করার কথা ছিল সাহিত্যে। আমরা একটা চমৎকার উত্তরাধিকার পেয়েছিলাম পূর্বসূরিদের হাত থেকে। কই? রবীন্দ্রনাথের পর আমরা তো আর কোনো বিশ্ব স্বীকৃতি পেলাম না বাংলা সাহিত্য দিয়ে? আমাদের অবকাঠামো কই ক্রীড়াক্ষেত্রে? আমাদের মাঠ কই? আমাদের এখানে একাডেমি আছে? প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে? জেলায় জেলায় ভালো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়? স্কুল টুর্নামেন্ট গুরুত্ব পায়? এই হীন স্বাস্থ্য ঊনপ্রাণশক্তির দেশে সাকিব আল হাসানরা একেকটা বিস্ময়। এই বাচ্চা ছেলেটা পৃথিবীর এক নম্বর অলরাউন্ডার! উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকীর চোখে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছিলেন। তেমনি বিস্ময়ের নাম তামিম ইকবাল। তিনিও উইজডেন সাময়িকীর চোখে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার। দুই বছর ধরে আমাদের দল ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে। নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে সম্প্রতি। ওরা আমাদের অনেক আনন্দের উপলক্ষ দিয়েছে।
আজ ওরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমালোচনা করার অনেক সময় আমরা বিশ্বকাপের পরে পাব। এটা কি সমালোচনা করার সময়? এখন আমাদের কর্তব্য, আমাদের কাঁধটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। ওদের বুকে জড়িয়ে ধরে বলা, এই দুঃসময় থাকবে না। তোমাদের ক্ষমতা আছে। তোমরা পারবে। ৪ মার্চের কথা ভুলে যাও।
আমার তো এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও, আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব। আমার মা যদি গরিব হন, তবু তিনি মা। তাঁকে তো আমি ছেড়ে যেতে পারব না। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই। ওরাই আমাদের সেরা ১৫, এটা তো ওদের অপরাধ নয়। আমি আমার বাংলাদেশ টিমকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
২০০৩ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা পুরস্কার নিতে গিয়ে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছিলেন: ১৯৯৭ সাল। মালয়েশিয়ায় হচ্ছে আইসিসি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল। বাংলাদেশ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে। পাইলট মাঠে নামলেন। আজ হেরে গেলে সব শেষ। বিশ্বকাপ খেলা হবে না, টেস্ট স্ট্যাটাস তো দূরের ব্যাপার। তিনি প্রার্থনা করলেন, আল্লাহ, আমাদের জিতিয়ে দাও। এর বিনিময়ে তুমি যাকে চাও তুলে নাও। আমার সবচেয়ে প্রিয়জনকে তুলে নেওয়ার বিনিময়ে হলেও জয় দাও।
সেদিন দর্শকের সারিতে বসে আমি কাঁদছিলাম। আজও এই লেখাটা লিখতে গিয়ে আমি কাঁদছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা দেশের জন্য উৎসর্গ করতে পারেন না এমন কিছু নেই। ওঁরা যখন জেতেন, তখনই কেবল আমরা ওঁদের পাশে থাকব? ওঁরা যখন হারেন, তখন ওঁরা কেউ নন? আমাদের ক্রিকেট দলকে বলি, তোমরা আমাদের অনেক দিয়েছ। অনেক দিতে পারবেও। তার বদলে আমার চোখের জলটুকু তোমরা নাও। এই জল ভালোবাসার জল। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা জিতলেও থাকব। হারলেও থাকব। থাকব আর বলব, হবে। এই দেশটাকে দিয়েই হবে। সাকিব আল হাসান, তোমাদের দিয়েই হবে। তামিম ইকবাল, আমরা তোমাদের পাশে আছি। আমি জানি, দেশের বেদনায় তোমরা আমাদের চেয়েও বড় আগুনে জ্বলছ। তোমরা বিশ্বাস হারিয়ো না। তোমরা পারবে। আমরা তোমাদের ভালোবাসি। জানি, ভালোবাসলে কষ্ট বাড়ে। তবু ভালোবাসব। কবির ভাষায়, ‘কিছু না পাওয়ার চেয়ে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়া ভালো’। দেশকে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়ার মধ্যে কোনো অগৌরব নেই।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.