ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর করতে হবে-যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে করণীয়

একসময় বলা হতো, যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা। কিন্তু এখন যক্ষ্মার সুচিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। এটা নিরাময়যোগ্য রোগ। প্রধান শর্ত হলো, নিয়মিত ও নির্ধারিত মাত্রায় ওষুধ সেবন করতে হবে। সেখানে ভুল হলে যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। একে বলা হয় এমডিআর যক্ষ্মা (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি)।


তখন রোগের চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমডিআর যক্ষ্মা রোগীদের পৃথকভাবে ও আলাদা ব্যবস্থাপনায় রেখে চিকিৎসা করারই নিয়ম। না হলে অন্য রোগীর মধ্যেও এই বিপজ্জনক রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও শৈথিল্য চলছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
মারাত্মক গণ্য করে এমডিআর যক্ষ্মা রোগীদের শুধু জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে একই ওয়ার্ডে সাধারণ যক্ষ্মা রোগী ও অন্য রোগীদেরও রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যার তুলনায় রোগী বেশি বলে নিয়ম ভাঙতে হচ্ছে। কিন্তু এতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা কি উপেক্ষা করা যায়? কারণ, এমডিআর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কঠিন ও ব্যয়সাধ্য। এ রোগের সংক্রমণ রোধ করার কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য পৃথক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। শয্যাসংখ্যার অভাব কোনো অজুহাত হতে পারে না। অর্থসংকট থাকলে নতুন তহবিল সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বাগ্রে এদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের বেশ সাফল্য রয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) অনুযায়ী যক্ষ্মায় মৃত্যুহার ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা। ১৯৯০ সালে প্রতি লাখে যক্ষ্মায় মারা যেত ৭৬ জন। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে লাখে ৪৫ জন। আগামী চার বছরে এই মৃত্যুহার লাখে ৩৮ জনে নামিয়ে আনা খুবই সম্ভব। এ জন্য দরকার সচেতন উদ্যোগ।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যক্ষ্মার চিকিৎসা) পদ্ধতির চিকিৎসায় মোটামুটি সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এ চিকিৎসা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়া পূর্ণ সাফল্য পাওয়া যাবে না। ধারাবাহিক প্রচেষ্টা থাকলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ক্রমান্বয়ে যক্ষ্মা নির্মূলের দিকে আমরা যেতে পারব। পৃথিবী থেকে বসন্ত নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। যক্ষ্মাও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা আজ আর দূরের বিষয় নয়।

No comments

Powered by Blogger.