বিদেশি বিমানের জিএসএ ব্যবসা চান এরশাদ! by টিপু সুলতান

সরকারের কাছে বিদেশি দুটি বিমান সংস্থার জিএসএ (জেনারেল সেলস এজেন্ট বা বিক্রয় প্রতিনিধি) ব্যবসা চেয়েছেন মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত বছরের ৬ জুন পাঠানো এক উপ-আনুষ্ঠানিক পত্রে এরশাদ অভিযোগ করেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে তাঁকে


জিএসএ ব্যবসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তদন্ত করেছে। সম্প্রতি এই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, বিদেশি এয়ারলাইনস তার জিএসএ কাকে নিয়োগ করবে, তা ওই প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। এতে বাংলাদেশ সরকার, সিভিল এভিয়েশন বা মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই।
মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রে দেখা যায়, এরশাদ তাঁর চিঠিতে দাবি করেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে ইত্তেহাদ এয়ারলাইনস ও এয়ার আরাবিয়ার জিএসএ হওয়ার জন্য এরশাদকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এরপর তিনি বিমান সংস্থা দুটির অবতরণ অনুমতির জন্য তৎকালীন বিমানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তখন বাংলাদেশ বিমান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (সিভিল এভিয়েশন) আপত্তির কারণে সেটা আর হয়নি। পরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই অন্য প্রতিষ্ঠান এয়ারলাইনস দুটির জিএসএ পায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই চিঠি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় গত বছরের ৪ জুলাই। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সম্প্রতি কমিটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির (সিএমইউ) আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এমিরেট এয়ারলাইনস, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ ও এয়ার এরাবিয়াকে তাদের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হিসেবে মনোনয়ন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজকে ২০০৬ সালের ১ মার্চ ঢাকা-আবুধাবি-ঢাকা গন্তব্যে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি এয়ার এরাবিয়াকে চট্টগ্রাম-শারজাহ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ভূতপূর্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহোদয়ের এয়ার এরাবিয়া কিংবা ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের জিএসএ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কোনো তথ্য অত্র কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তদুপরি তিনি কখনো জিএসএ হিসেবে নিয়োগ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা তথ্যও অত্র কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করেন নাই।’
কমিটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে জিএসএ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অধিকার একমাত্র সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাই রাখে। এতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ শুধু নিযুক্ত জিএসএ-কে এ দেশে কাজ করার জন্য অনাপত্তি প্রদান করে থাকে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এরশাদ হঠাৎ করে বিদেশি বিমান সংস্থার জিএসএ পেতে তৎপর হন। এই কাজে তাঁর পক্ষে মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন কার্যালয়ে তদবির ও তৎপরতা চালাচ্ছেন বিগত বিএনপি সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার ছেলে। এই দুজনের যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের একটি সাশ্রয়ী বিমান সংস্থার জিএসএ নিযুক্ত হয়েছে। তাঁদের তৎপরতায় মন্ত্রণালয়ের বিমান শাখার কর্মকর্তারা তটস্থ। মন্ত্রণালয়ের কেউ তাই এ বিষয়ে স্বনামে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সাবেক ও বর্তমান সরকারের দুই প্রভাবশালীর ছেলে ও জামাতার তরফ থেকে তাঁদের ওপরও চাপ আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের করার কিছু নেই, সেটা তাঁদের জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে এইচ এম এরশাদের বক্তব্য জানার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত ২৪ মার্চ তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এই প্রতিবেদকের নাম-পরিচয় জেনে কী বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী, তা বিস্তারিত শোনেন। কিন্তু গত বিএনপি ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির জামাতা ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা পাওয়ার চেষ্টা এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের আনুকূল্য পেতে প্রধামন্ত্রীর কাছে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরি ব্রাদার (ভাই), আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তাই এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’
এরপর এরশাদের প্রেস সচিব ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায়ের মাধ্যমে সরাসরি দেখা করে নথিপত্র নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। এরশাদের ব্যস্ততার কথা জানিয় তিন দিন পর যোগাযোগ করতে বলেন সুনীল শুভ রায়। তিন দিন পর যোগাযাগ করলে আজ-কাল করে ঘোরাতে থাকেন। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে সুনীল শুভ জানান, এরশাদের সঙ্গে এই সাক্ষাতের তারিখ ঠিক করার দায়িত্ব দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর ওপর বর্তেছে। এরপর এরশাদের সঙ্গে কথা বলে জিয়াউদ্দিন জানান, ১২ এপ্রিল সকাল ১০টায় এরশাদ সাক্ষাৎ দেবেন। সাক্ষাতের স্থান জানার জন্য আগের দিন ১১ এপ্রিল বিকেলে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রাতে তিনি জানাবেন। রাত ১০টার দিকে আবার ফোন করলে তিনি বলেন, তিনি এরশাদের বাসায় যাচ্ছেন, কথা বলে জানাবেন। এরপর তিনি আর কিছু জানাননি। পরে একটি খুদেবার্তা দিয়ে তাঁর অপেক্ষায় থাকার কথা জানানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। রাত সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা এবং সর্বশেষ গতকাল সকালেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও জিয়াউদ্দিন আর ফোন ধরেননি। তাই এ বিষয়ে এরশাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.