নারীর অগ্রযাত্রা-বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বরাতে একটি সুখবর প্রকাশিত হয়েছে বুধবারের সমকালে। বাংলাদেশের নারীদের অভাবনীয় অগ্রযাত্রা_ খবরটির প্রতিপাদ্য। অনেক খারাপ খবরের ভিড়ে এ সংবাদটি নিশ্চিতভাবেই বহু মানুষকে আশান্বিত ও প্রণোদিত করবে। এ কথা সত্য, সঙ্গত কারণেই গণমাধ্যমগুলো খারাপ খবরে আকীর্ণ থাকে।


গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতি কায়েমের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ বাস্তবতার নিত্যকার সঙ্গী একরাশ খারাপ সংবাদ। এ অবস্থাটি হতাশাজনকও বটে। কেউ কেউ আশা হারিয়ে মনে করেন, এ দেশের নতুন উত্থান সুদূরপরাহত। দৃশ্যত, তেমন মনে হলেও দেশ এগিয়ে চলছে। অনেকেই মনে করেন, ব্যাধি আমাদের রাজনীতিতে। নেতিবাচক রাজনীতি ও রাজনীতিকদের অনৈক্য সত্ত্বেও নাগরিকদের মধ্যে ছোট-বড় নানা উদ্যোগ সচল রয়েছে। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে পোশাক কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিদেশে কর্মরত প্রতিটি ব্যক্তি তিল তিল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির দিকে। আর এ অগ্রযাত্রায় নারীর অবদান বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। পশ্চাৎপদ সামাজিক প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা আজ আর অন্তঃপুরবাসিনী নয়। শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারীরা আজ চার দেয়ালের অবরোধ থেকে বেরিয়ে এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ রীতিমতো বিস্ময়কর। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরা ভালো ফল করছে। অনেক সময় ছাত্রদের চেয়েও তাদের ফল সন্তোষজনক। রাজনীতিতে আগের চেয়ে বেশি তাদের অংশগ্রহণ। দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেতৃত্বে নারীর অবস্থান পুরো বিশ্বেই ব্যতিক্রমী ঘটনা। দুই নেত্রী ছাড়াও সংসদে, মন্ত্রিসভায়, নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। আশার কথা, এ অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। গ্রামীণ নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণসহ নানা এনজিও উদ্যোগের ইতিবাচক ফল মিলছে। বহু নারী শুধু নিজেরা নয়, পরিবারকেও স্বাবলম্বী করে তুলেছে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে। শহরের গার্মেন্ট শিল্পে কর্মরত নারীরা তো কর্মক্ষেত্রে সংখ্যাগত উপস্থিতি দিয়েই রীতিমতো বিপ্লব এনেছে। শহরের রাস্তায় দল বেঁধে কাজে যাওয়া কিংবা কাজ থেকে ফেরত আসা নারীদের দেখলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত মেলে। এ নারীরা শুধু শ্রম দেয় না, তাদের মতামত, অধিকার বোধ ও দায়িত্বশীলতাও স্পষ্ট। তারা নিজেদের পায়ে যেমন দাঁড়িয়েছে, তেমনি দাঁড় করিয়েছে নিজেদের পরিবারগুলোকেও। গার্মেন্ট শ্রমিকরা শুধু নিজেদের শ্রেণীর জন্যই নয়, সমাজের অন্য স্তরের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে সে অবস্থানে আসতে নারীদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ত্যাগও করতে হয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে বাংলাদেশ এক অসামান্য অগ্রগতির সাক্ষী হতে পেরেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি করে চাকরি, ব্যবসা ও অন্য উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে। শহর-গ্রামের তারতম্য এখানে খুব বেশি চোখে পড়ছে না। নারীর এ অগ্রযাত্রার কাহিনী গণমাধ্যমে কি খুব বেশি উঠে আসছে? কারও কারও মতে, অনেক শুভ সংবাদ প্রকারান্তরে উপেক্ষিতই হচ্ছে। আমরা মনে করি, শুভ সংবাদগুলো গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপিত হওয়া উচিত। আগামীতে নারীর অগ্রযাত্রার পথে ভালো খবরগুলো প্রেরণার উৎস হতে পারে। পাশাপাশি সরকারসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে। নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করার পথে অন্তরায়গুলো দূর করার উদ্যোগগুলো এই সুখবরে গতি পাক, এটাই
আমাদের কামনা।

No comments

Powered by Blogger.