পরিবহনে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করলো পুলিশ

অবশেষে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পরিবহন চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশ। খোদ পুলিশেরই দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এর জন্য নীচের স্তরের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন তারা।
এদিকে সংসদীয় কমিটি বলছে, নীচের স্তরের কর্মকর্তাদের দায়ী করে নিজেদের দায় এড়ানো যাবে না।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিবন্ধন পদ্ধতি পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে কমিটি। এছাড়া একাধিক জায়গা থেকে নিবন্ধন নেওয়ার কারণে চাঁদাবাজি বেশি হচ্ছে বলে কমিটি মত দিয়েছে।

কমিটি বলছে, শ্রম আইনের আওতায় মালিক সংগঠনগুলো পড়ে না। এ সংগঠগুলো জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নেওয়ার বিধান রাখা দরকার।

বুধবার সংসদ ভবনে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে করণীয় নির্ধারণে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অধীনে গঠিত উপ-কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. ইসরাফিল আলম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার ও রওশন জাহান সাথী বৈঠকে অংশ নেন। 

এছাড়া বৈঠকে পুলিশের ডিআইজি (হাইওয়ে) মো. হুমায়ুন কবীর, ডিএমপি জয়েন্ট কমিশনার ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ট্রাসপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকারকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি।

বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিজেদের সংগঠন পরিচালনার জন্য কোনো সংগঠন রাস্তায় চাঁদা নিতে পারে না। এটা অবৈধ।

কমিটি জানিয়েছে সারাদেশে পরিবহন খাতে দৈনিক প্রায় দুই কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা তাদের মতামত দেওয়ার সময় সড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় ডিআইজি (হাইওয়ে) মো. হুমায়ুন কবীর ও ডিএমপি জয়েন্ট কমিশনার ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমান পুলিশের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তবে তারা বলেন, ‘সড়ক ও মহা সড়কে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে তার জন্য নীচের স্তরের কর্মকর্তারা দায়ী।’

এ সময় কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘নীচের স্তরের কর্মকর্তারাতো আপনাদের অধীনেই কাজ করে। সুতরাং এ দায় আপনাদেরও।’

বৈঠকে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পুলিশরা। পরিবহন খাতে যে চাঁদা আদায় হয়, তার সবচেয়ে বড় অংশ পায় পুলিশ। এরপরে মালিক ও শ্রমিকরা। ঢাকা মহানগরীতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশের জন্য ৮০টি গাড়ি রিক্যুজিশন দেওয়া হয়। এরপরও পুলিশ জোর করে গাড়ি রিক্যুজিশন নেয়। এর থেকে বাঁচতে অনেকে পুলিশকে টাকা দিয়ে রেহাই পায়।’

বৈঠকে ডিআরইউ নেতারা পরিবহনে অবৈধ চাঁদা আদায় বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের দাবি জানান।

বৈঠকে টিআইবি ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সড়ক খাতে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে নগদ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।

বৈঠকের পরে ইসরাফিল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো মালিক বা শ্রমিক সংগঠন রাস্তা বা পরিবহন থেকে চাঁদা নিতে পারবে না। যদি নেয় নেয়, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুলিশও বিভিন্নভাবে চাঁদা নিচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। লাইসেন্স সমস্যা, গাড়ির সিগনাল লাইটের সমস্যা দেখিয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করে।’ 

তিনি বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনার জন্য সদস্যরা টাকা দেবে। অথচ এই পরিচালনার ব্যয় তারা বিভিন্ন পরিবহন থেকে তুলছে। একই বাস একাধিক স্থানে চাঁদা দিচ্ছে। যে পরিমান চাঁদা আদায় করা হয়, তার একটি বড় অংশই পায় মালিকরা।’

সংগঠন নিবন্ধন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মালিক সমিতি কোনোভাবেই শ্রম আইনের আওতায় নিবন্ধন নিতে পারে না। তারা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিলেই ভালো হয়। কমিটি এ ব্যাপারে সুপারিশ করবে।’

চাঁদাবাজি বন্ধে উপ-কমিটির আগামী বৈঠকে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে ইসরাফিল বলেন, ‘কমিটির কাছে যেসব মতামত এসছে, তার ভিত্তিতে বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী সুপারিশ করা হবে।’

‘রাস্তায় ও যানবাহন থেকে চাঁদার নেওয়া বন্ধে কমিটির জোর সুপারিশ করবে। এছাড়া প্রচলিত শ্রম আইন কার্যকর বিষয়েও কমিটির সুপারিশ থাকবে।’ যোগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ অক্টোবর কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য পুলিশকে দায়ী করেন শ্রমিক নেতারা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই সংসদীয় কমিটি পুলিশের বক্তব্য জানতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.