ফেসবুকের পাঁচ মিথ!

ফেসবুক আপনার ছবি বিক্রি করে দিচ্ছে! ফেসবুকে ছবি আদান-প্রদানের বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়। বন্ধুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস শেয়ারের পাশাপাশি ছবি শেয়ার করেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় খুবই জরুরি, আপনি এমন সব ছবি ফেসবুকে শেয়ার করবেন, যা যে কেউ দেখলে কিংবা কিছু করলে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।


কারণ, আপনি ফেসবুকে ছবি আপলোড করে যদি আপনার অ্যাকাউন্টটি মুছেও ফেলেন, ফেসবুকে ছবিগুলো সংরক্ষিত থেকে যায়। আর এমন কথা ফেসবুকের টার্মস অব সার্ভিসের (টিওএস) মধ্যেই লেখা রয়েছে।
ফেসবুকে যদি কোনো ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টটি মুছে দেন, এর পরও তাঁর তথ্য, ছবি তাঁর সঙ্গে যুক্ত অন্য ব্যবহারকারীদের পাতায় থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তাঁর প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবেন। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের মতে, এখন ছবি আপলোড করা, ছবি শেয়ার করার বিষয়গুলো ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছামতো প্রাইভেসি সেটিংসের মাধ্যমে ঠিক করে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার ছবি বিক্রি করে দেবে, এমন কোনো বিষয় নেই। আর আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী ছবি ফেসবুকে দিচ্ছেন, এর মানে ফেসবুক আপনার ছবি বিক্রি করে দিচ্ছে—এ বিষয়টি একটি মিথ ছাড়া কিছু নয়।

ফেসবুক আপনার সামাজিক দক্ষতা ধ্বংস করে দিচ্ছে!
ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক পুরোনো বন্ধু ও পরিচিতদের খুঁজে পাওয়ার সুযোগটা অনেক ব্যবহারকারীই কাজে লাগান। ফেসবুকের কল্যানে এ কাজটি সম্ভব হয়েছে এবং কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই! কিন্তু পশ্চিম লন্ডনের মানসিক স্বাস্থ্য ট্রাস্টের মানসিক রোগের চিকিৎসক হিমাংশু তেয়াগি সতর্ক করেছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো যোগাযোগকে সহজ করে দিলেও বাস্তব বিশ্বের যোগাযোগকে কমিয়ে দিচ্ছে! তরুণ প্রজন্ম, যাঁরা বেড়ে উঠছেন, তাঁরা ফেসবুকের মাধ্যমে নিজেকে ভার্চুয়াল জগতে আবদ্ধ করে ফেলছেন, যা বাস্তবজীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আরেক মানসিক রোগের চিকিৎসক এরিক সিগম্যান ফেসবুকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যহানির ঘটনাও ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
মূল বিষয় হচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অধিকাংশই মনে করেন, ফেসবুক তাঁদের বন্ধুত্বের জায়গাটিকে সহজ করে দিয়েছে; এর বাইরে কিছু নয়। বিষয়টি নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক আসলে ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখছে, যা হয়তো ব্যস্ততার এ সময়ে সম্ভব হয়ে উঠত না। এ ছাড়া এ গবেষণায় আরও এসেছে, শুধু পরিচিত বন্ধু ছাড়া ফেসবুকের কল্যাণে পরিবারের অনেকেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য নানা ধরনের নতুন উপায় ব্যবহার করেন, যা সম্পর্ক গভীরের ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক। তাই ফেসবুক আপনার সামাজিক দক্ষতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে—এ বিষয়টি পুরোই একটি মিথ!

এক্স প্রতিষ্ঠান ফেসবুক কিনে নিচ্ছে!
বিভিন্ন সময়ে খবর আসে, ফেসবুক কিনে নিচ্ছে কোন একটি প্রতিষ্ঠান! কিন্তু শুরুর দিকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ফেসবুক কেনার ব্যাপারে কথা বলেছিল। ফেসবুক যাত্রা শুরু করার দুই বছর পর সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু ফেসবুক কেনার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল এবং এর দাম ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি ডলার!
এর এক বছর পর মাইক্রোসফট ফেসবুককে কেনার জন্য এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার প্রস্তাব দেয়! এসব বিষয় ছিল শুধুই আলোচনার মধ্যে। ২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্ক জাকারবার্গ জানান, ফেসবুককে বিক্রি করে দেওয়া এ প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য নয়। ফেসবুক কাজ করে যাচ্ছে সর্বোচ্চ উপায় ও পদ্ধতি তৈরি করতে, যা ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা একে অন্যের সঙ্গে দ্রুত যুক্ত হতে পারেন। সুতরাং ফেসবুক কিনে নিচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠান নামে যে কথা ছড়ানো হচ্ছে, তা পুরোই একটি মিথ!

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা আইডিয়া চুরি করেছেন!
মাত্র ২৪ বছর বয়সে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের তরুণ বিলিনিওয়ার ঘোষণা করেছে। খোদ ফেসবুক তৈরির ক্ষেত্রে আইডিয়া চুরির অভিযোগ রয়েছে জাকারবার্গের বিরুদ্ধে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় হার্ভার্ড কানেকশন নামের একটি সাইট তৈরিতে নিজের কিছু বন্ধুর সাহায্য নিয়েছিলেন জাকারবার্গ। হার্ভার্ড কানেকশনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জাকারবার্গ ইচ্ছা করেই এ কাজটির দায়িত্ব নিয়ে হেলাফেলা করতেন, যাতে তিনি নিজে নিজেই এ রকম একটা ওয়েবসাইট ব্যক্তিগত উদ্যোগে বানাতে পারেন! জাকারবার্গ জানান, ফেসবুক তৈরি হয়েছে তাঁর আগের ওয়েবসাইট ফেসম্যাশ থেকে। ফেসম্যাশ ছিল হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছবি শেয়ার ও এর তুলনা করার একটি ওয়েবসাইট। আর এখন ফেসবুকের উদ্দেশ্যও তাই। মূল বিষয়টি হচ্ছে, ফেসবুক তৈরিতে হার্ভার্ডের যে আইডিয়া চুরির অভিযোগ করা হয়েছিল, তা একটি মিথ!

ফেসবুক ব্যবহারে খরচ লাগবে!
সাধারণভাবে জীবনের শুরু থেকেই সবাই একটি বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন, কোনো কিছু বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না! আর এ বিষয়টি মাথায় আসতেই অনেকেই ভাবতে থাকেন, ফেসবুক ব্যবহারের জন্য হয়তো খরচ দিতে হবে। এ বিষয়টি সামনে আসে যখন, ২০০৮ সালে একজন এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক এক ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, একজন ব্যবহারকারীকে যদি এক মাসে ফেসবুক ব্যবহারের জন্য পাঁচ ডলার করে দিতে হয়, তাহলে শুধু নতুন ব্যবহারকারীর ফি হিসেবেই ফেসবুক আয় করতে পারে কয়েক শ মিলিয়ন ডলার। এ বিষয়টি ছিল শুধুই আলোচনার মধ্যে। কারণ, ফেসবুক জানিয়েছে, ফেসবুক ব্যবহারের জন্য কোনো ধরনের অর্থ নেওয়ার চিন্তা নেই প্রতিষ্ঠানটির। বিজনেস উইক-এর এক সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা শের্ল সেন্ডবার্গ জানিয়েছেন, ফেসবুকের মূল আয়ের বিষয়টি হয় বিজ্ঞাপনের আয় থেকে। আর ভবিষ্যতেও এ মাধ্যমেই আয়ের ব্যাপারে ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই ফেসবুক ব্যবহার করতে খরচ লাগবে—এ বিষয়টি পুরোই মিথ!
হাউ স্টাফ ওয়ার্কস অবলম্বনে নূরুন্নবী চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.