এপিএস ফারুক উধাও ড্রাইভার কোথায়?

অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর আত্মগোপন করেছেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার। আদাবরের নিজ ফ্ল্যাট ছেড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ অজ্ঞাত অবস্থানে চলে গেছেন তিনি। অন্যদিকে তাঁর গাড়িচালক আলী আজম খানেরও সন্ধান মিলছে না।
ঘটনার পর থেকে তাঁর অবস্থানের ব্যাপারে নানা রকম তথ্য মিললেও তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তাঁদের কাউকে আটক অথবা গ্রেপ্তারের বিষয়ও স্বীকার করছে না পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও কেউ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় আমরা কাউকে আটকও করিনি।'
গতকাল রাজধানীর আদাবর এলাকায় অবস্থিত ওমর ফারুকের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। সেখানে কেউ নেই। পিসি কালচার হাউজিংয়ের ৩ নম্বর রোডের এ ফ্ল্যাটে ফারুক মাত্র ছয় মাস আগে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী তৌফিক আহমেদ পলাশ বলেন, 'ঘটনার পরদিন সকালে ওমর ফারুক স্যার ফ্ল্যাটে ফিরেছিলেন। অন্য একজন চালক তাঁর গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে আসেন। পুরনো চালক আজম খানকে দেখিনি। মঙ্গলবার সকালে স্যার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে একটি রিকশা নেন। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীও বেরিয়ে যান; কিন্তু কেউ আর ফ্ল্যাটে ফিরে আসেননি।'
ভবন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অঙ্গন ডেভেলপার কম্পানির কাছ থেকে প্রায় দুই বছর আগে পাঁচ তলার ফ্ল্যাটটি কিনেছেন ওমর ফারুক। স্ত্রী ও সন্তান ছাড়াও ফ্ল্যাটটিতে কিছুদিন আগে তাঁর এক শ্যালিকা বসবাস শুরু করেন। এ বাসাতেই শ্যালিকার বিয়ের আয়োজন করেন ওমর ফারুক। তখন লন্ডন প্রবাসী শ্যালকও যাতায়াত করতেন বাসাটিতে। অর্থ কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তিনি ভবন-সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না এবং তাঁর ফ্ল্যাটেও এখন কেউ আসছে না। ধানমণ্ডিতে তাঁর আরেকটি ফ্ল্যাট আছে বলে শোনা গেলেও কেউ ঠিকানা বলতে পারেনি।
অন্যদিকে গাড়িচালক আজমের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন জানান, অল্প দিন এ বাসায় যাতায়াতের কারণে আজমের বাসা সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে ঢাকা উদ্যানের দিকে কোথাও ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
এদিকে টাকার বস্তাসহ আটকের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এ দুজন কিভাবে, কোথায় গেলেন সে ব্যাপারে মুখ খুলছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ-সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে চলছেন। যেখানে তাঁরা দীর্ঘ সময় আটক ছিলেন সেই বিজিবি কর্তৃপক্ষও চুপচাপ। মামলা অথবা জিডি না হওয়ায় পুলিশও দায়িত্ব নিচ্ছে না। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, এপিএসের গাড়িচালক আজমকে গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের কেউ এ বিষয় স্বীকার করেননি।
সার্বিক বিষয় প্রসঙ্গে নিউ মার্কেট থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব কিংবা তাঁর গাড়িচালকের ব্যাপারে থানায় কোনো সংবাদ নেই। গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ধরনের জিডি অথবা মামলা হয়নি। কারো পরিবার থেকেও খোঁজ নিতে আসেনি কেউ। এ অবস্থায় পুলিশের আপাতত কোনো উদ্যোগও নেই। তিনি বলেন, 'ঘটনা শুনেছি পিলখানার ভেতর ঘটেছে। বিজিবি সদর দপ্তর এলাকাটি ডিএমপির চারটি থানা এলাকায় অবস্থিত। ৩ নম্বর গেট নিউ মার্কেট, ৪ নম্বর গেট ধানমণ্ডি, সিনেমা হলসংলগ্ন অংশটুকু লালবাগ ও বাকি এলাকা হাজারীবাগ থানার অধীনে। কিন্তু রাতে এসব এলাকায় পুলিশের যাতায়াত নেই। এ কারণে বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পেলে পুলিশের কিছু করার নেই।'

No comments

Powered by Blogger.