মরা মুরগির ব্যবসা-নৈতিকতাবিরোধী হারাম কাজ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র মরা মুরগির ব্যবসা করছে। নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করেই তবে এসব কেনাবেচা হচ্ছে। মরা মুরগি পুড়িয়ে ফেলা বা ধ্বংস করার কথা থাকলেও ওই চক্র পোলট্রি ফার্ম বা বাজার থেকে মরা মুরগি সংগ্রহ করে দেদারসে বিক্রি করছে বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে।


সম্প্রতি রাজধানীতে এমনই একটি অসাধু চক্র ধরা পড়েছে র‌্যাবের হাতে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মরা মুরগি বিক্রির নেটওয়ার্ক শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও বিস্তৃত। তারা শুধু মরা মুরগিই নয়, মরা গরু বা খাসির গোশতও বিক্রি করে থাকে। মানুষের খাবার নিয়ে প্রতারণার এই নিষ্ঠুর বীভৎসতা দেখে দেশবাসী হতবাক। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা কিসিমের উদ্বেগ ও অজানা শঙ্কা। ডাক্তারদের মতে, মরা মুরগির গোশত খেলে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের মারাত্মক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি মানুষের কিডনি ও লিভারে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসলামী শরিয়তে মরা জীবজন্তু ও পশুপাখির গোশত খাওয়া হারাম। এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় এবং তা থেকে লাভবান হওয়াও হারাম। এমনকি কোনো জীবজন্তু বা পশুপাখি যদি মারা যায় তাহলে তা নিজ হাতে অন্য কোনো মাংসাশী প্রাণীকে খাওয়ানোও বৈধ নয়। এমতাবস্থায় সহজেই অনুমান করা যায় মরা মুরগির ব্যবসার বিষয়টি। মরা মুরগির ব্যবসা বিকৃত রুচির পরিচায়কও বটে। কোনো বোধসম্পন্ন মানুষ এ কাজ করতে পারে না। কারণ, ইসলাম মানুষের জন্য যা অনিষ্টকর, অকল্যাণকর ও নিকৃষ্ট, সেসব বস্তু, পণ্য ও বিষয় থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা জঘন্যতম এক অপরাধ। মরা মুরগির ব্যবসাটি সম্পূর্ণরূপে প্রতারণা তা আর নতুন করে বলতে হবে না।
এক শ্রেণীর অসাধু লোকের কারসাজিতে হাজার হাজার মানুষ নিজের অজান্তে হারাম খাবার খাচ্ছে। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। আমরা জানি, সাধারণ মানুষ পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত বিক্রেতাকে খোঁজে থাকেন; যেন ক্রয়কৃত পণ্যের গুণমান সঠিক থাকে। এমতাবস্থায় পণ্যে ভেজাল বা কোনো ধরনের কারসাজি করা ক্রেতাকে অবমূল্যায়ন বৈ অন্য কিছু নয়। জীবনধারণের জন্য খাবারের বিষয়টিও এমন। ফাঁকি দিয়ে হালালের নামে মানুষকে হারাম খাবার খাওয়ানো স্পষ্টত প্রতারণা। ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছুই নেই যে, তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিথ্যার আশ্রয় নেবে_ যে তোমাকে বিশ্বাস করে।' অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, 'যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।' উলিল্গখিত হাদিসের আলোকে এ কথা সহজেই প্রমাণিত হয় যে, ধোঁকাবাজ ব্যবসায়ী ইসলামী আদর্শের গণ্ডিবহির্ভূত বলে গণ্য হবে। এসব ব্যবসায়ী নৈতিক গুণাবলি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্যুত। অর্থলোভ ও নোংরা মনমানসিকতা তাদের নৈতিকতাবোধ ও বিবেককে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা মহাপ্রতারক, নীরব ঘাতক এবং দেশ ও ধর্মের দুশমন।
পূর্বেই বলা হয়েছে, মরা মুরগি হালাল খাবার নয়, হারাম। বরং এটা স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। এক শ্রেণীর অসাধু হোটেল ব্যবসায়ী ভোক্তাদের সঙ্গে মিথ্যা বলে, ধোঁকা দিয়ে এসব হারাম খাওয়াচ্ছে। খাবার নিয়ে এ ধরনের প্রতারণার জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়া উচিত। অতিদ্রুত এসব বিক্রি বন্ধ না করলে সারাদেশে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বার্থেই মরা মুরগি খাওয়ানোর দায়ে অভিযুক্ত হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা দরকার। মৃত জীবজন্তু খাওয়ার ব্যাপারে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীবজন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও নামে উৎসর্গ করা হয়।'-সূরা আল বাকারা : ১৭৩
এই আয়াতের আলোকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, যেসব প্রাণী হালাল করার জন্য শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জবাই করা জরুরি, সেসব প্রাণী যদি জবাই ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে যেমন_ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে, অসুস্থ হয়ে কিংবা দম বন্ধ হয়ে মারা যায়, তবে সেগুলোকে মৃত বলে গণ্য করা হবে এবং সেগুলোর গোশত খাওয়া হারাম।
জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবসা এক উত্তম পেশা। ইসলামের ব্যবসানীতি হলো, ব্যবসায় কোনো ধরনের ধোঁকা, প্রতারণা, মিথ্যার আশ্রয়, শঠতা ও অসৎ উদ্দেশ্য থাকবে না। কিন্তু মানুষকে ঠকিয়ে এভাবে মরা মুরগি, গরুর গোশত ও পচা ডিম খাওয়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, আজ সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা কোথায়? ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার জন্য তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত নয়? স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হারাম খাবার খাইয়ে মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া কি এক ধরনের হত্যা নয়? দেশের মানুষ এর প্রতিকার ও সুষ্ঠু
বিচার চায়।
muftianaet@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.