দুঃখজনক এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভাঙচুর কাম্য নয়-বাসশ্রমিকের হাতে ছাত্রের মৃত্যু

জীবন কেড়ে নেওয়া যেন খুব সহজ ও সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। তা না হলে সামান্য বচসার ঘটনার পরিণতিতে কেন পরিবহনশ্রমিকদের হামলায় প্রাণ হারাতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ রেদোয়ানকে! ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সম্ভাবনার বাকি পুরো জীবনটি ছিল সামনে পড়ে।


এমন একটি ছেলেকে যে পরিবারটি হারিয়েছে, কোনো সান্ত্বনাই তাদের এই ক্ষত সারাতে পারবে না। এই মৃত্যু খুব স্বাভাবিকভাবেই রেদোয়ানের সহপাঠীদের স্পর্শ করেছে, তাঁদের ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় যা হয়েছে, তাও অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করে যে আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রেদোয়ান নিহত হওয়ার ব্যাপারে ছাত্রদের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা খুবই গুরুতর। ছাত্রদের অভিযোগ, পরিবহনশ্রমিক ও ছাত্রদের সঙ্গে বচসার সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়েও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবহনশ্রমিকেরা ছাত্রদের পিটিয়েছেন এবং রেদোয়ানকে পিটিয়ে ট্রাকের নিচে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে বলে ছাত্ররা জানিয়েছেন। পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকের তরফ থেকে অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য দৌড় দেওয়ার পর ট্রাকের নিচে পড়েছেন রেদোয়ান। আমরা চাই, ছাত্ররা যে অভিযোগ করেছেন, তার যথাযথ তদন্ত হোক। এ ঘটনায় আরও একজন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। শ্রমিকেরা যে ছাত্রদের নির্মমভাবে মারধর করেছেন, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এ ধরনের বর্বরতার সঙ্গে জড়িত পরিবহনশ্রমিকদের খুঁজে বের করে তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রেদোয়ানের মৃত্যুর পর যে ছাত্ররা নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই, এই গাড়িগুলো বা গাড়িগুলোর মালিক ও যাত্রীরা কোনোভাবেই রেদোয়ানের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। পত্রপত্রিকায় যে ছবিগুলো ছাপা হয়েছে, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভাঙচুরে অংশ নেওয়া ছাত্রদের কাছে জানতে চাই, গাড়ি বা বাসের এই যাত্রীদের কী অপরাধ? প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া ছবিতে হামলার মুখে বাসযাত্রীরা যেভাবে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন, একটি শিশু যেভাবে বাস থেকে নামার চেষ্টা করছে, তা দেখে ভাঙচুরে অংশ নেওয়া ছাত্রদের মনে আদৌ কি কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছে? আমরা নিশ্চিত যে মানবিক বোধসম্পন্ন যেকোনো ছাত্রের পক্ষেই বিষয়টি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে ছাত্ররা বিরত থাকবেন।
নিহত রেদোয়ানের পরিবার ও তাঁর সহপাঠীদের প্রতি আমরা শোক ও সমবেদনা জানাই। একই ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর ছাত্র জহিরুল হক জিসানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

No comments

Powered by Blogger.