সরকারি সংস্থার গাফিলতিই কি আসামির পলায়নের কারণ?-যুদ্ধাপরাধের বিচার

গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এটি সর্বসামপ্রতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এর আগে এই অভিযোগে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হলেও একই অভিযোগে আসামি আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারে পুলিশের ব্যর্থতা হতাশাজনক।

ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় অভিযুক্ত আবুল কালাম আযাদকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর বাসায় উপস্থিত হতে সময় নেয় আরও প্রায় চার ঘণ্টা। বুধবার প্রকাশিত প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির মেয়ে জানিয়েছেন, আযাদ পরোয়ানা জারির আগের রাত, অর্থাৎ সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ঘটনা বিশ্লেষণে সন্দেহের অবকাশ থাকে না—আযাদ আগাম সংবাদ পেয়েই পালিয়েছেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘সর্ষেয় ভূত না থাকলে পালাবেন কী করে?’ তিনি আরও বলেন, ‘কোন সন্ত্রাসী কোন দোকানে চা খায়, কোথায় দাড়ি কামায়—সে খবরও পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা রাখেন। তাহলে রাজাকার পালায় কী করে?’ প্রশ্নটি সবার এবং উত্তর দিতে হবে সরকারকেই।
পুলিশের হাতে আটক আযাদের ছেলে ও নিকটাত্মীয়রা জানিয়েছেন, আযাদ ভারত হয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে পালিয়ে গেছেন। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পলাতককে আটক করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। অতীতে এ প্রক্রিয়ায় কাউকেই দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। আযাদের বেলায় সরকার সফল হবে, এ ভরসাও কম।
পলাতক অবস্থায়ও আসামিদের বিচার হওয়া সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের যেসব শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার অভিযুক্ত ব্যক্তির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তাঁরা সবাই চাইবেন আসামিরা ধরা পড়ুক এবং শাস্তি ভোগ করুক। সব আসামি ধরা না পড়লে এই সান্ত্বনাটুকু তাঁরা পাবেন না।
দৃশ্যত, সরকারি সংস্থার গাফিলতিতেই আযাদের পলায়ন সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনার শিক্ষা এই যে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যতটা ধুরন্ধর ও তৎপর, সরকারি সংস্থার কার্যক্রম ততটা নয়। দেশবাসীর দাবি, সরকার বিচার-প্রক্রিয়া নিশ্ছিদ্র করতে আরও সতর্কতা ও সংকল্প দেখাবে।

No comments

Powered by Blogger.