স্কুল ছাত্রছাত্রী হত্যা-কোথায় চলেছে সমাজ?

সোমবার সব সংবাদপত্রে খবর ছিল 'জামালপুরে উদ্ধার করা কার্টনবন্দি লাশটি ঢাকার স্কুলছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের।' বুধবারে সংবাদপত্রে রয়েছে আরেকটি মর্মান্তিক খবর_ 'অপহরণের পর বগুড়ার কাহালুতে স্কুলছাত্র নাইমুল ইসলামকে হত্যা, লাশ পোড়ানো হয়েছে ইটভাটায়।'


নিষ্পাপ বালিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়ার আগে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত অন্যান্য বাহিনী একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও এ দুটি ঘটনায় আটক হয়েছে ঘাতকরা। যারা এ পর্যন্ত আটক হয়েছে, আমাদের আরও শিউরে উঠতে হয়_ বয়সে তারাও কৈশোর কিংবা প্রথম যৌবনে পা দিয়েছে। কাহালুর নাইমুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এখন পড়ছিল সপ্তম শ্রেণীতে। তার ঘাতকদের স্বীকারোক্তি_ হত্যার পরও পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হয়। জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘাতক রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একই ফ্ল্যাটে তারা বসবাস করত। এসব মর্মন্তুদ ঘটনা যে কাউকে ব্যথিত না করে পারে না।
আমাদের সমাজ কেন এত নিষ্ঠুর হয়ে পড়েছে? আমাদের দেশের শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। পাঠ্যবইয়ে রয়েছে মূল্যবোধ ও মানবিক অনুভূতির কথা। তারপরও প্রশ্ন স্বাভাবিক_ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে? কেউ কেউ বলবেন, দুটি ঘটনা থেকে সমাজ উচ্ছন্নে যাচ্ছে, এমন উপসংহার টানা যায় না। কিন্তু উৎকণ্ঠার বিষয়_ এ ধরনের আরও নিষ্ঠুরতা ঘটছে নিয়মিতই। গত অক্টোবরে বরিশালের আগৈলঝাড়ার গৈলায় স্কুলশিক্ষিকা শারমিন আক্তারের ঘাতকও ছিল বয়সে তরুণ। ৯ এপ্রিল আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। যে কোনো অপরাধেরই শাস্তি হওয়া উচিত এবং তা যত দ্রুত সম্ভব করা চাই। শারমিন আক্তারের ঘাতকের দ্রুত শাস্তি হয়েছে এবং আশা করব, উচ্চ আদালতেও এর নিষ্পত্তি দ্রুত হবে। জান্নাতুল ফেরদৌস ও নাইমুল ইসলামের ঘাতকরা চিহ্নিত এবং তাদেরও দ্রুত বিচার হতে হবে। একই সঙ্গে চাই আত্মবিশ্লেষণ_ কোথায় চলেছি আমরা? সমাজের সর্বত্র এ আলোচনা হোক এবং তা থেকে নিশ্চয়ই শুভ ও সুন্দরের পথে চলার বার্তা মিলবে।

No comments

Powered by Blogger.