ঢাকা সিটি নির্বাচন-দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি by মোশাররফ বাবলু

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বর্তমানে দেশের বাইরে। নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি দেশে ফেরার পর। তবে মাঠপর্যায়ের নেতারা ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন।


এ ক্ষেত্রে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এক ডজনের বেশি নেতা সরব হতে শুরু করেছেন। আর কাউন্সিলর পদে আগ্রহী ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার সংখ্যা দুই শতাধিক।
বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপির সিদ্ধান্ত কী হতে পারে তা আগেভাগে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। দলের একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন করলে দলীয় ফোরাম এক ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে। আর নাগরিক ফোরামের ব্যানারে কাউকে সমর্থন করলে সিদ্ধান্ত আসবে আরেক ধরনের। এই দুই সিদ্ধান্ত মাথায় রেখেই নির্বাচন সামনে রেখে এগুচ্ছে বিএনপি।
ডিসিসির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত যোগ্য ও সৎ প্রার্থী কারা, তাঁদের খোঁজখবরও নিচ্ছে বিএনপি। চেয়ারপারসন দেশের বাইরে যাওয়ার আগে এমন নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
বিএনপির প্রায় একডজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজস্বভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে উত্তর ও দক্ষিণের সব ওয়ার্ডেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজস্বভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে কারা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে পারেন, তার তালিকা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিসিসি নির্বাচনে সরাসরি সমর্থনের সিদ্ধান্ত না নিলেও আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী পেলে তাঁকে মৌন সমর্থন জানাতে চায় দলটি। এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কিংবা মহাজোটের শরিক দলের কোনো প্রার্থীকেও সমর্থন দেওয়া হতে পারে।
এদিকে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপির ব্যানারে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহীর সংখ্যা ডজনেরও বেশি। এর মধ্যে দলের বাইরে সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাও আছেন। আগ্রহীরা সমর্থন পেতে লোকমুখে সমর্থন আদায় করতে জোর তদবিরও চালাচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হতে চান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক এমপি হারুনার রশীদ, ড. তুহিন মালিক, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, সাবেক কাউন্সিলর আবুল বাশার, সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ, নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন। মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদও ভেতরে ভেতরে বিএনপির সমর্থন চান।
ডিসিসি উত্তরের মেয়র প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সুশীল সমাজের পক্ষে ড. আসাফউদৌল্লা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ কাইয়ুম, বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম এবং সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এ খালেক। বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানও এখানে মেয়র পদে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী।
তবে নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থী হলেও মাহমুদুর রহমান মান্না এখনো বিএনপির সমর্থন চাননি। সমর্থন না চাইলে বিএনপি নিজে থেকে কাউকে সমর্থন দেবে না। মান্না সরাসরি সমর্থন চাইলে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে বলে দলের একটি সূত্র জানায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ডিসিসি নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পত্রপত্রিকায় দেখেছি অনেকেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী। অনেকে নিজের মতো করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যোগাযোগ করছেন। কিন্তু মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে কাদের সমর্থন দেওয়া হবে তা আমার জানা নেই। সিদ্ধান্ত হবে চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর।'
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'চমক আছে, তবে বলা যাবে না। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনো কোনা সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা নির্বাচনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। চেয়ারপারসন চিকিৎসাশেষে দেশে ফেরার পর এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।'
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'আমি যেহেতু মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সেই হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছি। কোন কৌশলে এগুলে বিএনপির জন্য ভালো হয়, তা নিয়ে দলের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে।'
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আবদুস সালাম বলেন, 'ডিসিসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দলগতভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।' দলীয়ভাবে প্রচার না হলেও নিজ নিজ উদ্যোগে ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কারা নির্বাচন করতে আগ্রহী- জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, 'দুই শতাধিক নেতা কাউন্সিলর এবং একডজনের বেশি নেতা মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী।'

No comments

Powered by Blogger.