মোবাইল চুরি! নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত শরীরে মরিচ-লবণ দিয়ে শাস্তি by আহমেদ মিলন

হতদরিদ্র বাবার সন্তান সুমন মিয়া। এক বেলা ভাত পায় তো দু বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত দু’মুঠো ভাতের জন্য একদিন ঘর থেকে বের হয় রোজগারের আশায়। শুধু নিজের না, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিছু করতে হবে- এই পণ শিশু সুমনের মনে।

শ্রীপুর উপজেলায় এসে লেগুনা গাড়িতে হেলপারের কাজও পেয়ে যায় ভালুকা উপজেলার বড় কাশর গ্রামের হাসান মিয়ার ৭ বছরের শিশু সন্তান সুমন। সব খরচ বাদে প্রতিদিন হাতে আসে ৪০ টাকা। সে টাকা পাঠায় মা-বাবার জন্য। কাজের সুবাদে বন্ধুত্ব হয় শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ৯ বছরের ছেলে হেল্পার আব্দুল আহাদের সঙ্গে।

লেগুনার মধ্যেই রাত কাটে ওদের। শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর এলাকায় বাসস্ট্যান্ডে লেগুনার ভেতরে রোববার রাতে ঘুমিয়েছিল ওরা দু’বন্ধু।

সোমবার ভোরে হঠাৎ  অস্ত্র মামলায় জামিনে থাকা শরীফ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মোটরসাইকেলযোগে এসে দুই শিশুকে ঘুম থেকে উঠিয়ে টেনে-হিঁচড়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়।

সুমন-আহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় মোবাইল ফোন চুরির।

আচমকা ঘুমভাঙ্গা চরম আতংকিত শিশু দু’টিকে স্থানীয় সুফিয়া কটন মিলের পাশে সন্ত্রাসী শরীফদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাদেরকে আবদ্ধ করা হয় একটি ঘরে। তারপর সন্ত্রাসীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে তাদের ওপর শুরু করে নির্মম নির্যাতন। কিন্তু মোবাইল ফোনের কোনো হদিস করতে পারে না। একপর্যায়ে বড়ভাই পর্যায়ের ওই তরুণরা পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত হয়ে শিশুদুটির শরীরের ক্ষত-বিক্ষত জায়গাগুলোতে মরিচের গুঁড়ো আর লবণ ছিটিয়ে দেয়। ভয়ার্ত আর্তচিৎকার করতে থাকা শিশুদুটো দিনের আলোয়ও যেন দেখতে থাকে ভয়াল দুঃস্বপ্ন।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ অবস্থায় প্রায় আলো-বাতাসহীন ওই ঘরে ফেলে রাখা হয় সুমন আর আহাদকে।

প্রায় মুমূর্ষু অবস্থার একপর্যায়ে মুক্তি দেওয়া হয় তাদেরকে। সুমন ও আহাদ বাংলানিউজকে জানায়, ওই মোবাইল চুরির বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।

এ ঘটনায়  শিশু আহাদের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার রাতে সন্ত্রাসী শরীফকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। শরীফ শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উত্তরপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।

শ্রীপুর থানার ওসি আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন,  ‘দুই শিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতনকরীদের ধরতে পুলিশের  অভিযান চলছে।’

No comments

Powered by Blogger.