পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে মানুষকে বিত্তবৈভব দেন পরীক্ষার জন্য

৭৪. ইয়াহ্লিফূনা বিল্লা-হি মা ক্বা-লূ; ওয়ালাক্বাদ ক্বা-লূ কালিমাতাল কুফরি ওয়া কাফারূ বা'দা ইছলা-মিহিম ওয়া হাম্মূ বিমা লাম ইয়ানা-লূ; ওয়া মা নাক্বামূ ইল্লা আন আগ্না-হুমুল্লা-হু ওয়া রাছূলুহূ মিন ফাদ্বলিহী; ফাইন ইয়্যাতূবূ ইয়াকু খাইরান লাহুম; ওয়াইন ইয়্যাতাওয়াল্লাও ইউআ'য্যিবহুমুল্লা-হু আ'যা-বান আলীমান ফিদ্ দুনিয়া- ওয়ালআ-খিরাহ্; ওয়া মা লাহুম ফিল আরদ্বি মিন ওয়্যালিয়্যিন ওয়ালা নাসীর।


৭৫. ওয়া মিনহুম্ মান আ'-হাদাল্লা-হু লাইন আ-তা-না মিন্ ফাদ্বলিহী লানাসাদ্দাক্বান্না ওয়ালানাকূনান্না মিনাস্ সা-লিহীন।
৭৬. ফালাম্মা আ-তা-হুম্ মিন ফাদ্বলিহী বাখিলূ বিহী ওয়া তাওয়াল্লাওঁ ওয়াহুম্ মু'রিদ্বূন।
৭৭. ফাআ'ক্বাবাহুম নিফা-ক্বান ফী ক্বুলূবিহিম ইলা- ইয়াওমি ইয়ালক্বাওনাহূ বিমা- আখ্লাফুল্লা-হা মা ওয়াআ'দূহু ওয়াবিমা- কা-নূ ইয়াক্যিবূন।
[সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৭৪-৭৭]

অনুবাদ : ৭৪. তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে, তারা অমুক কথা বলেনি। অথচ তারা অবাধ্যভাবে কথা বলেছে এবং তারা ইসলাম গ্রহণের (অন্তত মৌখিকভাবে) পর কুফর অবলম্বন করেছে। তারা এমন এক নিকৃষ্ট কাজ করার সংকল্প করেছিল, যা তারা সফল করতে পারেনি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদের যে বিত্তবৈভব দান করেছিলেন তারা (অকৃতজ্ঞের মতো) সেটারই প্রতিশোধ নিয়েছে। এর পরও এখনো যদি তারা তওবা করে, তবে তাদের কল্যাণ হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং পৃথিবীতে তাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।
৭৫. তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিল যে আল্লাহ যদি আমাদের তাঁর অনুগ্রহ দান করেন, তবে আমরা অবশ্যই তা থেকে সৎপথে দান করব এবং নিজেরা সৎলোক হব।
৭৬. কিন্তু যখন আল্লাহ তাদের তাঁর অনুগ্রহ দান করলেন তখন তারা কৃপণ হয়ে চলল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, এরা তো মুখ ফিরিয়ে নেওয়ারই দল।

ব্যাখ্যা : মুনাফিকরা তাদের বৈঠকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে এমনকি রাসুলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করত। তাদের সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে তা অঙ্গীকার করত। মুনাফিকরা আন্তরিক সদিচ্ছা থেকে ইসলাম গ্রহণ করেনি। তবে মুখে মুখে যেহেতু তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তাই তাদের মুসলমানই বলা হতো। তা ছাড়া তাদের মধ্যে কে মুসলমান আর কে মুনাফিক তা পৃথক করাও ছিল যথেষ্ট কঠিন। পরবর্তীকালে এসব মুনাফিকের মধ্যে যারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা হয়ে গেল মুরতাদ। মুরতাদরা কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। ৭৪ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পর তারা কী একটা গোপন ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তা পূর্ণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনো একটি বা একাধিক ঘটনার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। তবে ঠিক কোন ঘটনাটি তা স্পষ্ট নয়। নবী (সা.)-এর জমানায় এ রকম কয়েকটি ঘটনাই ঘটেছিল। যেমন মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই একবার এক ন্যক্কারজনক দুরভিসন্ধি করেছিল যে তারা মুসলমানদের মদিনা থেকে বের করে দেবে। তারা তাদের কুমতলব বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল নবী (সা.)-এর তাবুক অভিযান থেকে ফেরার সময়। মুনাফিকরা ১২ ব্যক্তিকে মুখোশ পরিয়ে এক গিরিপথে নিযুক্ত করেছিল, তারা যেন রাসুল (সা.)-কে অতর্কিত আক্রমণ করে। কিন্তু পরে তাদের সে ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হয়ে যায়। এ আয়াতের শেষাংশ থেকে পরবর্তী দুটি আয়াতে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো এদের মধ্যে এমন সব লোকও আছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহে বিত্তবৈভব লাভ করার পর আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, কৃপণ হয়ে পড়ে, জাকাত দিতে গড়িমসি করে এবং আল্লাহর পথে খরচ করে না। ৭৬ নম্বর আয়াতটি ফালাবা ইবনে হাতিব নামক এক ব্যক্তির এ রকম একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয় বলে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু উমামা (রা.) এক বর্ণনায় এ ঘটনাটি এনেছেন বলে জানা যায়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.