জিহাদের করুণ মৃত্যু-অর্থলোভে হৃদয় বিকল

অর্থলোভ কখনও কখনও মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। এ কারণে মুক্তিপণের অর্থের জন্য শিশু অপহরণ এবং শেষ পর্যন্ত অপহরণকারীদের হাতে অপহৃতের খুন হওয়ার ঘটনা এ দেশে বিরল নয়। এসব ক্ষেত্রে অপহরণকারীদের মধ্যে সুস্থ মানসিকতা বা সহৃদয়তার ছোঁয়া প্রত্যাশা করাটা বৃথা। এদের কাছে অর্থলাভটাই মোক্ষ।


যে কোনো ধরনের নৃশংসতা ঘটাতে এরা পিছপা হয় না। এরা আধুনিক যুগের সিমার। অপহরণের পর শিশু জিহাদকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনা হৃদয়হীনতার সর্বশেষ লজ্জাজনক ও করুণ উদাহরণ। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা কি একেবারেই রোধ করা যায় না? অপরাধীদের সংঘবদ্ধ হওয়ার আগেই শনাক্ত করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করা গেলে এক ধরনের সুফল ফলতে পারে। তখন প্রশ্ন আসবে, শনাক্ত করা যাবে কী করে? এখানেই প্রশ্ন আসে সামাজিক সচেতনতার। সমাজ সচেতন হলে ব্যক্তিপর্যায়েও অনেকের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তবে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে অন্যায়-অবিচার, নীতিহীনতা, দুর্নীতি প্রশ্রয় পেতে থাকলে সমাজ থেকে সুস্থ চিন্তাবোধ লোপ পায়। তখন সমাজ সচেতনভাবে এ ধরনের অপরাধকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারায়। আমাদের সমাজেরও হয়েছে তা-ই। আর রাষ্ট্র দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন_ এই আপ্তবাক্যকে কি তার কর্মের সারাৎসার করতে পেরেছে! শিশু জিহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে জিহাদের মতো আর যেন কোনো শিশু এভাবে প্রাণ না হারায়_ এর নিশ্চয়তা বিধান করতে পারলেই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা শিশু জিহাদের মৃত্যুর দায় থেকে মুক্তি পাব। শিশুদের নিরাপত্তায় অভিভাবকদেরও কর্তব্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা-মা বা অভিভাবকদের অবহেলায় বা ভুলের কারণে কোনো কোনো শিশু মৃত্যুর হিমশীতলতাকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়। এ ধরনের মৃত্যু এড়ানো যায়। এ জন্য পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.