সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিক্ষোভ-চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শুল্কায়ন বন্ধ

আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শুল্কায়ন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। একই আমদানি চালানে একাধিক কনটেইনার ধাপে ধাপে খালাসের ক্ষেত্রে আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে যৌথ অঙ্গীকারনামা দিতে বাধ্যবাধকতা


আরোপ করায় তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন আজ মঙ্গলবার কাস্টম হাউসে এসে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুরে কাস্টম হাউসে দেখা যায়, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাস্টম হাউসের মূল ফটক ঘেরাও দিয়ে রাখেন। দুপুর থেকে দফায় দফায় কাস্টম হাউস ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেন এজেন্টরা। এ সময় বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধিরা কাগজপত্র নিয়ে এসেও ঢুকতে পারেননি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বাধার কারণে গতকাল দুপুর থেকে কার্যত শুল্কায়ন, শুল্ক-কর পরিশোধ ইত্যাদি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় দুপুরের পর থেকে আমদানিকারকেরা যেমন শিল্পকারখানার কাঁচামাল খালাস করতে পারেননি, তেমনি রপ্তানিপণ্যও জাহাজিকরণ করা যায়নি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পকারখানার মালিকেরা। কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, নিয়মানুযায়ী একই চালানে একাধিক কনটেইনার শুধু ধাপে ধাপে খালাসের ক্ষেত্রে আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টকে অঙ্গীকারনামা দিতে হয়। সব কনটেইনার খালাস না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক কর্তৃপক্ষের যেকোনো আইনানুগ সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য থাকবেন বলে অঙ্গীকার দিতে হয়। কারণ, কোনো একটি কনটেইনারে অনিয়ম পাওয়া গেলে সেই চালানের সব কনটেইনারের ওপর বিচারাদেশ জারি করতে হয়। কাস্টম হাউসের কমিশনার মারুফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাস্টম আইন অনুযায়ী এ নিয়মের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এক চালানে একাধিক কনটেইনার একই দিন খালাস সম্ভব না হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে শুধু অঙ্গীকারনামা দিয়ে ধাপে ধাপে খালাস করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। সমপ্রতি একই চালানের দুটি কনটেইনারের একটি খালাস হওয়ার পর আরেকটি ঘোষণার বাইরে পণ্য পাওয়া যায়। কিন্তু ওই কনটেইনার ছেড়ে দেওয়ায় সেটিতে কোনো অনিয়ম আছে কি-না, তা শনাক্ত করা যায়নি। এরপরই কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কাস্টম হাউসের কমিশনারের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানান, সিএন্ডএফ এজেন্টরা অঙ্গীকারনামা দিতে পারবেন না। কিন্তু কমিশনার তাদের এ সিদ্ধান্তে রাজি না হওয়ার পর তাঁরা বৈঠক থেকে বের হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। জানতে চাইলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ধাপে ধাপে পণ্য খালাস করার পর সেই পণ্য আমদানিকারকের হেফাজতে নেওয়া হয়। সে কারণে আমদানিকারকেরা অঙ্গীকারনামা দিতে পারেন। কিন্তু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের হাতে পণ্য থাকবে না বিধায় তাঁরা কেন অঙ্গীকারনামা দেবেন? ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল বিক্ষোভের সময় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলেন, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতা, একই পণ্য চালান একাধিকবার কায়িক পরীক্ষা, পণ্যের মূল্য বেশি নির্ধারণ এবং কয়েকটি পর্যায়ে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের হয়রানির অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে গত ২০ মার্চ তাঁরা কমিশনারের কাছে চিঠিও দেন বলে জানান। এ বিষয়ে কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাস্টম হাউসের কোনো কর্মকর্তা হয়রানি করলে সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ না দিয়ে শুধু গড় অভিযোগ দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.