সহজিয়া কড়চা-সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি ও সমুদ্রজয় by সৈয়দ আবুল মকসুদ

একাত্তরে আমরা স্বাধীন ছিলাম না। হিংস্র বাঘ-ভালুক ও হায়েনার সঙ্গে খাঁচার মধ্যে বন্দী ছিলাম সাড়ে আট মাস আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ। তবে হিংস্রদের হাতে-পায়ে ধরেও ছিলাম না। তাদের ধারালো দাঁত ও তীক্ষ নখ ভাঙতে গিয়ে মরেছে আমাদের শতে শতে।


নয়টি মাস পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল বাংলার মানুষ। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের প্রশাসনের পতন ঘটে। ডিসেম্বরের শেষে প্রবাসী সরকার ফিরে আসে। বাহাত্তরের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বাহাত্তরের মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মিত্রবাহিনীর সেনারা বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে যেতে থাকেন। বাংলার মানুষ একটি ভয়ংকর শ্বাসরুদ্ধকর ও বিপজ্জনক অবস্থা থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পায়।
সব দেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম যে দুনিয়ার সব দেশ সমর্থন করে, তা নয়। তবে স্বাধীনতাসংগ্রামীদের ওপর গণহত্যা চালানো হলে অন্য দেশের বিবেকসম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ করেন এবং নির্যাতিতের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান। স্বাধীনতাকামী বাংলার মানুষের ওপর যখন ইতিহাসের জঘন্য গণহত্যা চালানো হয়, তখন বিভিন্ন দেশের বিবেকবান মানুষ তার প্রতিবাদ করেন এবং নির্যাতিতের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সেই দুর্দিনের বন্ধুদের ঋণ যেকোনো কৃতজ্ঞ জাতির স্বীকার করাই কর্তব্য।
পৃথিবীর নানা প্রান্তের অনেক জানা-অজানা বন্ধু অযাচিতভাবে সেদিন আমাদের সংগ্রামের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৩২ জন বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। তাঁদের মধ্যে ৭৬ জন নিজে এসে অথবা প্রতিনিধি পাঠিয়ে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন। সেই বাহাত্তরের পর এবারের স্বাধীনতা দিবসটি বিশেষ মাত্রা অর্জন করে।
চল্লিশ বছর পর এবারের মার্চ মাসটি আর একটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছিল। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তা নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিরোধ মীমাংসার মামলা করে। ১৪ মার্চ সেই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। বিচারকেরা তাঁদের বিবেচনায় যা ন্যায়সংগত, সেই রায় দিয়েছেন।
আমার যেটুকু জ্ঞানগম্যি আছে তা থেকে ধারণা করি, ওসব আদালতের বিচারকেরা একেবারেই নিরপেক্ষ। কোন দেশে কোন দলের বা জোটের সরকার নাকি সামরিক জান্তা ক্ষমতায় রয়েছে, কোন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতি মধুর বা অতি বিষাক্ত, কারা তাদের দেশের পার্লামেন্টে পরস্পর গালিগালাজ ও রাস্তায় হানাহানি করেন—তা তাঁরা বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা সম্ভবত জানেন না যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে কোন সরকার ক্ষমতায়। কোন দেশের কতটুকু প্রাপ্য সেটাই তাদের বিচার্য বিষয়। ওই সব দেশের বিচারকদের কাছে ন্যায়বিচারই মুখ্য, বাদী-বিবাদীর ব্যক্তিগত বা দলীয় পরিচয় নয়। তাঁদের কাছে দেশটা বড়—কোনো সরকার নয়। বিচার চলাকালে কোনো দেশের বা উভয় দেশেরই সরকার বদল হলে তাতে বিচারের রায়ে হেরফের হতো না।
বাঙালি কিন্তু নাগরিকত্ব পরিচয়ে বাংলাদেশিরা ভাষার রাজা। উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও শব্দ প্রয়োগে (যেমন সংসদে ও সভায় বক্তৃতাদানকালে) তারা কবিদের মতো দক্ষ। সমুদ্রসীমা বিরোধের রায় ঘোষণার পর থেকেই ব্যাপকভাবেই উচ্চারিত হচ্ছে সমুদ্রজয় ও সমুদ্রবিজয় শব্দযুগল। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি আর সমুদ্রজয়—দুই জিনিস। সমুদ্রজয় করেছিলেন কলম্বাস ও ভাস্কো-ডা-গামা। আগের দিনে পর্তুগিজ জলদস্যুরা সমুদ্র অভিযানে বের হতেন। ভাস্কো-ডা-গামা, দ্য আল্বুকোয়ের্ক প্রমুখ পর্তুগিজ অভিযানকারী আজ থেকে একেবারে ঠিক পাঁচ শ বছর আগে (১৫১১-১২ খ্রি.) ভারতবর্ষের কালিকট, গোয়া প্রভৃতি দখল করেন। তাঁরা ভারতের পশ্চিম-পূর্ব উপকূল ধরে শ্রীলঙ্কা (সিংহল), মালাক্কা-প্রণালি, মালয়েশিয়ার মালাক্কার দ্বীপগুলো, থাইল্যান্ড থেকে চীন পর্যন্ত জয় করেন। তার নাম সমুদ্রবিজয়। পানির মধ্যে একটি সীমানার নিষ্পত্তিকে সমুদ্রজয় বললে অল্পবয়স্ক বালক-বালিকারা বিভ্রান্ত হয়। আগের দিনের সমুদ্র অভিযানকারীরা খুবই নিষ্ঠুর হতেন। পর্তুগিজ সমুদ্রবিজয়ীরা গোয়া ও কেরালায় এসে অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেন, ক্যাথলিক বিচারসভা স্থাপন করে হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেন। প্রচার করেন খ্রিষ্টধর্ম। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সে রকম কোনো ব্যাপার ঘটেনি। আমরা আমাদের নৌতরী নিয়ে তাদের কোনো এলাকা দখল করিনি। তাদের লোকদের জোর করে ইসলাম বা হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করিনি। কোনো সম্পদও অপহরণ করিনি। সুতরাং কলম্বাসের আমেরিকা জয় বা ভাস্কো-ডা-গামার মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূল জয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সমুদ্রসীমার বিরোধ নিয়ে যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ও শুনানি চলছে, সে কথা আমার মতো অভাজনেরা অবগত থাকলেও কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা বিশেষ কিছু জানতেন, তা মনে হয় না। কিন্তু রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল তাঁদেরই আনন্দ সীমাহীন। দলমত-নির্বিশেষে সবাই খুশি হলেও উপাচার্য মহোদয়েরা অন্যদের আনন্দ প্রকাশের কোনো সুযোগই দিলেন না। ব্যাংকগুলো টাকার গুদাম। তাই তাদের কথা বাদ দিলাম। তারা বিজ্ঞাপন দিতেই পারে। কিন্তু উপাচার্য মহোদয়েরা সমুদ্রজয়ে যে অর্থ ব্যয় করেছেন, তা দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্ধেকটা করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাঁর কর্মকর্তা খুরশেদ আলমকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিরোধ মীমাংসায় অসামান্য আন্তরিকতা নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছেন। তা আমি অনুমানে অথবা শোনা কথা বলছি না, জেনেশুনে বলছি। গত এক বছরে ডা. দীপু মনি বিষয়টি নিয়ে যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন আমার মতো অভাজনও তাদের একজন। প্রধান দৈনিকগুলোর সম্পাদক ও গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের বারবার তিনি তাঁর অফিসে আমন্ত্রণ করেছেন। চাঁদপুরের স্বর্গীয় ইলিশ ও ডালভাতে তিনি আমাদের আপ্যায়ন করেছেন এবং মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। খুরশেদ আলম সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন, তা আমরা দেখেছি। বিজ্ঞাপনদাতা ভাইস চ্যান্সেলররা তা জানেন না।
দীপু মনি তাঁর বাবার সময় থেকেই আমাদের বোনের মতো এবং স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব। রায় বেরোনোর আগেই তিনি আমাদের বলেছেন, ১৪ তারিখে তা বের হচ্ছে এবং যেসব যুক্তিতর্ক আমাদের আইনজীবী দেখিয়েছেন তাতে আশা করি রায় আমাদের স্বার্থের অনুকূলে যাবে। রায় বেরোনোর পর আমি যখন তাঁকে ধন্যবাদ জানাই, তখন তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন, নেত্রীর উৎসাহ না পেলে আমরা এতদূর যেতে পারতাম না। ধন্যবাদ তাঁরই প্রাপ্য। অবশ্যই সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধন্যবাদ প্রাপ্য।
বিজ্ঞাপনদাতা ভাইস চ্যান্সেলরদের অবগতির জন্য সবিনয়ে জানাচ্ছি যে সমুদ্রবক্ষের তেল-গ্যাসের ব্লক ইজারা দেওয়া নিয়ে যখন তৎপরতা শুরু হয়, তখন থেকেই তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমরা সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছিলাম। অবশ্য এটাও ঠিক যে আমাদের কথাই শুনবেন এবং আমাদের দাবিই মানবেন—সরকার অত বোকা নয়। সরকার তার নিজের বুদ্ধিমতোই চলে। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের উদ্বেগ সীমাহীন এবং সে জন্য তাঁদের আহার-নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটছে, সে কথা আমরা ১৪ মার্চ ২০১২-এর আগে জানতাম না। সমুদ্রজয় করতে তাঁরা সরকারকে উৎসাহ অথবা জাতীয় কমিটির মতো চাপ দিয়েছেন—সে রকম তথ্য আমাদের জানা নেই।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের যে মোদ্দা কথা তা হলো: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি পেয়েছে ১,৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটারের সার্বভৌম বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি পেল ১,১১,০০০ বর্গকিলোমিটারের আরও এক ‘নতুন বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ‘বঙ্গোপসাগরে আরও একটি বাংলাদেশের জন্মদাত্রী প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা’। বিজ্ঞাপনগুলোতে এমন সব শব্দ, বাক্য ও বাক্যাংশ রয়েছে, তা যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত মানুষের রচনা তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তবে বাঙালি, নাগরিকত্ব পরিচয়ে বাংলাদেশিরা পারে—সব পারে।
কবিদের অর্থহীন বাক্যকেও আমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিই। কবি যখন গেয়ে ওঠেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ অথবা আরেক কবি যখন বলেন ‘মোর প্রিয়া হবে, এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল।/ কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।’ তখন আমরা আক্ষরিক অর্থে বাক্যগুলো নিই না। সুন্দরী যুবতী নারীর সঙ্গে সন্ধ্যার মেঘের কী সম্পর্ক? তবে আমরা জানি, কবি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রিয়াকে করেন রচনা। যত বড় খোঁপাই হোক, তাতে তারার ফুল গোঁজা সম্ভব নয় এবং তা ছাড়া আমাদের নক্ষত্র মোটেই ফুল নয়, তা আগুনের পিণ্ড। তৃতীয়ার চাঁদ দিয়েও দুল বানানো সম্ভব নয়। কবিদের কথার ঠিক নেই, তাই তাঁদের কথায় আমরা কিছু মনে করি না। কিন্তু কবিতা আর বিজ্ঞাপন এক জিনিস নয়। দুটোর ভাষা দুই রকম। তা ছাড়া বিজ্ঞাপন দিতে হয় টাকা খরচ করে, কবি কবিতা লেখেন নিখরচায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ডাইনিং হলের অবস্থা শোচনীয়। ছেলেমেয়েরা প্রায়ই আমাকে রাস্তার মধ্যে ধরে এবং অভিযোগ করে। সে সম্পর্কে লিখতে বলে। আমি ওদের বলি, আমি কে হে! আমার কথা কে শোনে? আমাদের অবহেলায় আমরা একটি মেধাহীন জাতি হতে যাচ্ছি। বাজারের পাকা পটল ও বাতিল সবজি কেনা হয় হলের জন্য। অতি বুড়ো গরু, খাসি ও মুরগির হাড্ডিসার মাংস। ডাল বলতে হলুদ রঙের পানি। সবচেয়ে মোটা বিস্বাদ ইরিচালের ভাত। কী খেয়ে হলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা চালাচ্ছে, তা কেউ জানার প্রয়োজন বোধ করেন না। লাইব্রেরিগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় বই। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই। সমুদ্রজয়ে আর একটি বাংলাদেশ প্রাপ্তির আনন্দে বিজ্ঞাপনের টাকাগুলো হলের উন্নত খাবারের জন্য বা বই কেনায় ব্যয় হলে জাতি উপকৃত হতো।
আর একটি ১,১১,০০০ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের নাম কী হবে? ঢাকার মতোই হতে পারে। বাংলাদেশ উত্তর এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ। অথবা বাংলাদেশ উত্তরের নামকরণ যখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, সুতরাং বাংলাদেশ দক্ষিণে যেহেতু গণ বা মানুষ নেই, আছে শুধু মাছ, তাই তার নাম হতে পারে ‘মৎস্যপ্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ বাংলাদেশ’।
বয়সের দিক থেকে আমরা বুড়ো হচ্ছি আর নাবালক হচ্ছি। মাথার তালুতে একটিও চুল নেই অথবা কাশফুলের মতো সাদা চুলঅলা বিদ্বানেরাও যখন বলছেন এ আনন্দ ‘একদিনেই শেষ হবে না, এটা সামনের নির্বাচন পর্যন্ত চলতে থাকবে’ তখন বিপন্ন বোধ করি। স্বনামধন্যরা বোঝার চেষ্টা করছেন না, মিয়ানমার সরকার আমাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত রয়েছে। কিছু সমস্যাও রয়েছে। আমাদের আনন্দ প্রকাশের মাত্রা দেখে যদি তাদের ক্রোধের বা বিরক্তির উদ্রেক হয়, তাতে আমরা দুটি বাংলাদেশ নিয়েও সুখে থাকতে পারব না।
বাঙালি কিন্তু নাগরিকত্বে বাংলাদেশি বলে পরিচিত মানুষগুলো চায় একটি উপলক্ষ। উপলক্ষ দরকার তার পদলেহনের জন্য। উপলক্ষ দরকার তার পদোন্নতির জন্য বা পুনর্নিয়োগের জন্য। উপলক্ষ দরকার অর্থ উপার্জনের জন্য। উপলক্ষ দরকার জনগণের অর্থ দরিয়ায় ঢালার জন্য।
বছরের পর বছর উদ্যাপিত হবে সমুদ্রবিজয় বার্ষিকী। তোলা হবে চাঁদা। হবে সারা দেশে সভা-সমাবেশ-সেমিনার-র‌্যালি। কক্সবাজার সৈকতে নির্মিত হতে পারে একটি স্মারকস্তম্ভ। কাল্পনিক সমুদ্রদেবীর উদ্দেশে সেই বেদিতে দেওয়া হবে ফুল। সেই ফুল দেওয়া নিয়ে মারামারিতে হরবছর হাত-পা যে ভাঙবে না জনা পঞ্চাশের, তা হলফ করে বলতে পারি না।
সুবিধাভোগীরা ব্যক্তিগত স্বার্থে যা খুশি তা-ই করতে পারেন, কিন্তু তাঁদের স্মরণ রাখা দরকার বাঙালি একটি প্রাচীন জাতি। তার এমন কিছু করা উচিত নয়, যা দেখে দুনিয়ার মানুষ দাঁত বের করে হাসে।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.