চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট-ট্রেনে শিবিরের হামলা, চালককে অপহরণ, তিন পুলিশ আহত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের এক চালককে (লোকোমাস্টার) ছাত্রশিবিরের কর্মীরা গতকাল সোমবার সকালে অপহরণ করেছেন। বাধা দেওয়ায় তাঁরা তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা করে তাঁদের আহত করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর দুপুরে চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়।


তএদিকে, একই দিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবহন দপ্তরে ঢুকে শিবিরকর্মীরা সাতটি বাসের মোট ২০টি টায়ার কেটে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। টায়ার কাটার ঘটনায় পুলিশ গতকাল ক্যাম্পাস থেকে শিবিরের ১৫ কর্মীকে আটক করেছে। চালককে অপহরণ করার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার শাটল ট্রেন চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চালকেরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গামী দিনের প্রথম শাটল ট্রেনটি নগরের বটতলী স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় ছেড়ে ঝাউতলা স্টেশনে এসে দুই মিনিটের জন্য থামে। এ সময় ছাত্রশিবিরের ৩০-৪০ জন কর্মী ট্রেনের চালককে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে চালকের কক্ষে ওঠেন। তাঁরা চালক গোপাল চন্দ্র দাশকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। এতে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। হামলায়
ষোলশহর ফাঁড়ির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন, নায়েক কামাল ও কনস্টেবল ইউনুস আহত হন। তাঁদের দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহত এসআই লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে চালককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের অভিযানের মুখে দুপুরে অপহূত গোপালকে নগরের আগ্রাবাদ এলাকা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর চালক গোপাল চন্দ্র দাশ প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণকারীরা তাঁকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়।
এদিকে, চালককে অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসের সঙ্গে শহরের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে গতকাল কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের বাসের টায়ার কেটে দেওয়ার পর পুলিশ দিনভর অভিযান চালিয়ে শিবিরের ১৫ জন কর্মীকে আটক করে। গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে, ট্রেনে হামলা ও চালকদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুই দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন’। ওই সংগঠনের সভাপতি মো. রফিক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার চালকেরা শাটল ট্রেন চালাবেন না।
শাটল ট্রেনে হামলা ও চালককে অপহরণ এবং বাসের চাকা নষ্ট করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আশিকুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্তৃপক্ষ আবাসিক হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীদের নিজেদের আসনে তুলে না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখেছে। হলে থাকতে না পেরে কটেজে থাকা শিক্ষার্থীদের এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
শাটল ট্রেনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গতকাল সোমবারও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১৬টি শ্রেণীকক্ষের তালায় সুপার গ্লু দিয়েছেন। এ অবস্থায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক মিল্টন বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের দুই নেতা নিহত হন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়। তবে ছাত্রশিবির চার দফা দাবিতে ওই দিন থেকে ছাত্র ধর্মঘট পালন করে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ-দৌল্লা সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য আমরা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

No comments

Powered by Blogger.