মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন-ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাব

জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়লে শুধু পরিবহন-ব্যয়ই বাড়ে না, জনজীবনের সব ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। গত সপ্তাহে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলে পরিবহন খাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যেকোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর আগে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা সরকারের ভেবে দেখা উচিত ছিল।


তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে দাম বাড়ালে জনদুর্ভোগ অনেকটা কমানো যেত। কিন্তু সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা বাড়ানো হয়। এই অজুহাতে পরিবহন-মালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ান। কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে এবং পরিবহন-মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরিবহন-মালিকদের একাংশ তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পুরো ব্যাপারটিতে যে যাত্রীদের পকেট কাটার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে কেবল পরিবহন-ব্যয়ই বাড়েনি, বেড়েছে চালসহ সব নিত্যপণ্যের দামও। বছরাধিক কাল ধরে বাজারের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানো সাধারণ মানুষের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবেই বিবেচিত হবে। ভরা মৌসুমে যেখানে চালের দাম কমার কথা, সেখানে ব্যবসায়ীরা বর্ধিত পরিবহন-ব্যয়ের দোহাই দিয়ে দাম বাড়িয়ে চলেছেন।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ছিল। গ্যাসের বর্ধিত দামের কারণে পরিবহন-ব্যয়ের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন-ব্যয়ও বাড়বে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা এর দায় চাপাবেন ক্রেতা ও ভোক্তাদের ওপরই। ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন তারা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যেতে পারে না।
গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অসময়োচিত সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। এর আগে বিদ্যুৎ ও পানির দামও বাড়ানো হয়েছে। এভাবে সেবা খাতের দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়বে। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত কোনো পরিবহন সংস্থা যাতে না নিতে পারে, সেই নিশ্চয়তাও দিতে হবে। যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করার অধিকার কারও নেই। অন্যদিকে ভোক্তারা যাতে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়েন, সে জন্য টিসিবির মাধ্যমে বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহের বিকল্প নেই। প্রতিবছর পবিত্র রমজান সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা লাভে তৎপর হয়ে থাকেন। এ ব্যাপারেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিধিও বাড়াতে হবে। সব নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারকে নিতে হবে টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ।

No comments

Powered by Blogger.