সরাসরি গ্রেপ্তারের বিধান বাতিল করাকে স্বাগত জানাই-মানহানি মামলা ও সাংবাদিক

সাংবাদিক সমাজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় ফৌজদারি কার্যবিধির এমন একটি ধারা বাতিল হয়েছে। গত বুধবার জাতীয় সংসদে ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) বিল, ২০১১ পাস হওয়ার ফলে মানহানিকর কোনো সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিধান বাতিল করা হয়েছে।


এ বিধানটি বাতিল হওয়ার ফলে নিশ্চিতভাবেই সাংবাদিকেরা অনেক হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন। আমরা জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত বিল পাসকে স্বাগত জানাই।
ফৌজদারি কার্যবিধির আগের বিধান অনুযায়ী, মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক ও প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা যেত। আইন সংশোধন হওয়ার ফলে এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করে আদালত সমন জারি করে তাঁদের ডাকতে পারবেন। নতুন এই বিধানের আওতায় শুধু সংবাদপত্র নয়, যেকোনো বইয়ের লেখক ও প্রকাশকও একই সুবিধা পাবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির এই পরিবর্তন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে চেতনা, তাকে নিশ্চিতভাবেই জোরদার করবে। আমাদের সংবিধান চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ মানহানির অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিকদের সরাসরি গ্রেপ্তার করার বিধান কার্যকর থাকায় অতীতে এর অপব্যবহার হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকেরা যেমন হয়রানির শিকার হয়েছেন, তেমনি কার্যত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা।
তবে এখানে একটি বিষয় স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার চর্চা কখনো কখনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানহানির কারণ হয়েছে। বিষয়টি অনিচ্ছাকৃতভাবে যেমন হতে পারে, তেমনি বিদ্বেষমূলক বা উদ্দেশ্যমূলক সাংবাদিকতার কারণেও হতে পারে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিষয়টি তাই যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতাও মেনে চলাও জরুরি। সংবাদপত্রসংশ্লিষ্ট বা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত আমাদের সবার এটা প্রতিনিয়ত মনে রাখা উচিত, একজন মানুষের সুনাম আইনের চোখে তার সবচেয়ে বড় সম্পত্তি। এই সুনাম নষ্ট করা বা তা কেড়ে নেওয়া তার সবকিছু কেড়ে নেওয়ারই শামিল। ফলে দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি চিন্তা ও বিবেক স্বচ্ছ রেখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশই সংবাদপত্রসেবীর কাজ।
গত বুধবার সংসদে যে বিলটি পাস হয়েছে, তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই আইন পাস হওয়ায় সাংবাদিক, সম্পাদক, লেখক ও প্রকাশকের অহেতুক হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা এই বিলের উদ্দেশ্য ও এর চেতনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। তবে একই সঙ্গে আমরা এটাও মনে করি, সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী এ বিধানটি বাতিল হওয়ায় গণমাধ্যমের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। এখন গণমাধ্যমকে আরও বেশি সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে, যাতে তাদের ভুলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানহানি না ঘটে। সাংবাদিকদের উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ রাখতে হবে, যাতে বিদ্বেষ বা স্বার্থের কারণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানহানির ঘটনা না ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.