প্রধানমন্ত্রীর দাবি-খালেদার নির্দেশেই ইলিয়াস লুকিয়েছে

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার 'নাটক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়ার নির্দেশেই ইলিয়াস আলী লুকিয়ে আছেন- এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,


'আন্দোলনের ইস্যু না পেয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) নতুন নতুন নাটক সাজাচ্ছেন। তিনি সব সময় নতুন খেলা খেলে যাচ্ছেন। নিজেরা নিজেদের গুম বা লুকিয়ে রেখে আবার জ্বালাও-পোড়াও, মার-কাট ও হরতালের হুমকি দিচ্ছেন।'
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব মন্তব্য করেন।
হত্যা-গুম করার রাজনীতি বিএনপিই শুরু করেছে- এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব জিয়ার আমল থেকেই শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি শুরু করেন। হত্যা-খুন-গুম ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। নিজের দলের লোককে খুন ও গুম করা বিএনপির চরিত্র। চট্টগ্রামে জামাল উদ্দিনকে তাদের দলের নেতারা খুন করে গুম করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকেই হারিছ চৌধুরী লুকিয়ে আছেন। আজকে আবার শোনা যাচ্ছে, তাঁদের আরেক নেতা গুম হয়েছেন।'
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করার জন্য নেত্রীর নির্দেশেই লুকিয়ে থাকতে পারেন ইলিয়াস আলী। তাঁরা তো আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো ইস্যু পাচ্ছেন না। তাই নতুন নতুন নাটক সাজাচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আবার তিনি নতুন কী খেলায় মেতে উঠেছেন কে জানে।'
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাত খুনের আসামি, ডাকাত ও চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) নতুন করে জোট করেছেন। যিনি সাত মার্ডারের আসামিকে নিয়ে জোট করেন, নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দুর্নীতি করেন, নিজের ছেলেদের দুর্নীতি করা শিখিয়ে বিপথে ঠেলে দেন- তিনি দেশকে কী দেবেন? কিভাবে নতুন প্রজন্মকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন? আসলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে তিনি অশান্তিতে ভোগেন। তাই নানা ষড়যন্ত্র করছেন।' তিনি সবাইকে বিএনপির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এইচ টি ইমাম, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন নূহ-উল-আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিল।
'গুমের রাজনীতি বিএনপিই শুরু করেছে'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কৃষক লীগের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় বলেন, 'গুমের রাজনীতি বিএনপিই শুরু করেছে। তারা নিজেদের লোক মেরে আমাদের ওপর দোষ চাপায়। আওয়ামী লীগ গুমের রাজনীতি করে না।' কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা এখন মানবাধিকার ট্রেনিং দিচ্ছি। আপনাদের সৃষ্টি আপনাদেরই খাবে।'
ইলিয়াস আলী 'নিখোঁজ' হওয়ার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছি। স্বজন হারানোর ব্যথা আমার চেয়ে কেউ বেশি বোঝে না।' বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'ওদের চরিত্র হলো নিজেরা অঘটন ঘটাবে আর দোষ চাপাবে আওয়ামী লীগের ওপর। ওরা কিভাবে অপকর্ম করে তা বের করা উচিত।'
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এপিএসের কারণে রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন- এই নজির বাংলাদেশে নেই। আওয়ামী লীগ এই নজির স্থাপন করেছে।' এ ঘটনা নিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী থাকতে খালেদা জিয়ার এপিএস শামসুল আলম দুর্নীতি করেছিলেন। কই তিনি তো পদত্যাগ করেননি। বিরোধী দলের নেত্রীর এপিএসের দুর্নীতির কথা তো কেউ পত্রিকায় লিখছেন না। এগুলোও স্মরণ রাখা উচিত।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বস্তাভরা টাকার সংস্কৃতি কে নিয়ে এসেছে? বস্তাভরা টাকা হাওয়া ভবন আর গাজীপুরের খোয়াব ভবনে নিয়ে মানুষের চরিত্র কারা নষ্ট করেছে?' প্রচার মাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "রুলস অব বিজনেস দেখে পত্রপত্রিকায় লিখলে ভালো হয়। বড় বড় ইংরেজি কাগজে যাঁরা লেখেন 'সুরঞ্জিত ব্যাক', তাঁদের রুলস অব বিজনেস জানা উচিত। কারো জিঘাংসার উদ্দেশ্য থাকলে লিখতে পারেন। আমার কিছু বলার নেই।"
রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'তদন্ত হচ্ছে। ফল বের হলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর না করবেন ততক্ষণ রেলমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু আমরা তা করিনি, তাকে সরিয়ে দিয়ে দপ্তরবিহীন করেছি। তানজিম আহমেদ সোহেল তাজও পদত্যাগ করেছে। আমরা তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাইনি। সে এখনো দপ্তরবিহীন মন্ত্রী রয়ে গেছে।'
কৃষক লীগের সভাপতি মির্জা আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন মতিয়া চৌধুরী, রহমত আলী, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মোতাহার হোসেন মোল্লা।

No comments

Powered by Blogger.