এই অনাচার বন্ধ করতেই হবে-সনদ-বাণিজ্য

টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই যদি সনদ পাওয়া যায়, তাহলে তো কেউ কষ্ট করে পড়াশোনা করতে চাইবে না। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব কতটা ভয়াবহ হবে, আন্দাজ করাও কঠিন। পড়াশোনা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাওয়া গেলে তাতে সমাজে দুর্নীতি ও অনাচারই ছড়িয়ে পড়বে না, গোটা প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।


দেশের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে নিছক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এসবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনেক কথা বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এই সুযোগে কিছু প্রতিষ্ঠান কী গুরুতর অনিয়ম করে চলেছে, তার এক চিত্র উঠে এসেছে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে। গাইবান্ধায় যেখানে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খোলার অনুমতিই নেই, সেখানে তারা ক্যাম্পাস খুলে বসেছে; আর চালাচ্ছে রমরমা সনদ-বাণিজ্য। গাইবান্ধা ক্যাম্পাসের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির ভাষ্যে সেখানকার শিক্ষা-পরিস্থিতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। লোক-দেখানো লিখিত পরীক্ষা, পরীক্ষায় বই খুলে লেখা, এমনকি পরীক্ষায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ না করেই ফি বাড়িয়ে দিয়ে এক বা দুই বছরের কোর্সের সনদ মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পাওয়া যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই যদি হয় পরিস্থিতি, সেখানে উচ্চশিক্ষার মানের প্রশ্ন তো অবান্তর হয়ে দাঁড়ায়। এমন সব গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, কেন অবাধে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করে সনদ দিতে পারে, তা এক বিস্ময়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তাহলে কী কাজ?
শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে আইনকানুন মেনে চলার বিকল্প নেই। যেখানেই এর ব্যত্যয় ঘটবে, সেখানেই দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সনদ-বাণিজ্য বন্ধ করতেই হবে। শিক্ষার মানের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সর্বোপরি তদন্ত সাপেক্ষে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.