এই ব্যক্তির পদ ধরে রাখার কি অধিকার আছে?-৪০০ টাকার সিভিল সার্জন

তিনি একজন সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের অতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁর একটি স্বাক্ষরের মূল্য মাত্র ৪০০ টাকা! যেখানে দুর্নীতির পরিমাপ বস্তা বস্তা টাকায় হওয়াই বর্তমান চল, সেখানে এত অল্প মূল্যের দুর্নীতি সত্যিই বিস্ময়কর। এহেন সস্তা দুর্নীতির মতো তাঁর দুর্নীতির ক্ষেত্রটিও অতি মামুলি।


তবে সরকারি চাকরিপ্রার্থীর স্বাস্থ্যসনদে সই করাকেও দুর্নীতির আওতাভুক্ত করার কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। সস্তা হলেও ময়মনসিংহের সিভিল সার্জনের দুর্নীতি অতি সৃজনশীল।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য সিভিল সার্জনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রত্যয়নপত্র (স্বাস্থ্যসনদ) নেওয়াই রীতি। সরকারিভাবে এর জন্য টাকা নেওয়ার কোনো বিধানও নেই, সুযোগও নেই। কিন্তু একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার সুযোগ সৃষ্টি এবং উপায় বের করার মতলববাজির কোনো অভাব ঘটে না। ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন আতিয়ার রহমান সে রকমই এক মতলববাজ। তিনি এভাবে টাকা নেওয়াকে রীতিমতো ঐতিহ্য বলে দাবি করেন। প্রথম আলোর প্রতিনিধির কাছে তিনি গর্বভরে বলেন, তাঁর আগের ১৭ জন সিভিল সার্জনও এভাবে টাকা নিয়েছেন এবং এটা ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য। অবশ্য তাঁর সহকারীর আত্মসম্মানবোধ প্রবল। তিনি বলেছেন, ‘আমি এ রকম ১০০-২০০ টাকা ঘুষ খাই না।’ কত টাকা হলে ঘুষে তাঁর রুচি আসে, তা তিনি না বললেও সিভিল সার্জন ২০০ টাকা ঘুষ চাইতেও দ্বিধা করেননি। জেলা প্রশাসক পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মকর্তা, যাঁর ওপর আবার ময়মনসিংহের মতো একটি শহরের সবার স্বাস্থ্যরক্ষার ভার, কতটা অধঃপতিত হলে তিনি এমনটা হতে পারেন?
এই ঘটনা মামুলি মোটেই নয়, বরং গুরুতর। যিনি স্বাস্থ্যসনদে সই করার জন্য ৪০০ টাকা করে দিনে ১২-১৪ বার ঘুষ নিতে পারেন, আরও বড় ক্ষেত্রে তিনি দুর্নীতি না করে পারেন না; বিশেষ করে বিভাগীয় শহরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর সেই সুযোগ অবারিত। বহু দিন ধরে এটা চালিয়ে আসায় প্রমাণিত হয়, তাঁর প্রতি প্রশাসনের ছাড় রয়েছে। একটি দেশের সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি কতটা ডুবে থাকলে এ ধরনের ব্যক্তি এত বড় পদে আসীন থাকতে পারেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরষের মধ্যেই যখন শক্তিধর ভূতের আলামত দেখা যাচ্ছে, তখন প্রতিকারের আশা সুদূরপরাহত। এ রকম অবস্থায় সৎ ও বিবেকবান জনগণেরই সরব হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। সরকার, প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁরা সৎ ও সেবাপরায়ণ, তাঁদের উৎসাহিত করার জন্যও এটা দরকার। সরকারেরও বোঝা উচিত, দুর্নীতি শেষ বিচারে আত্মঘাত ডেকে আনে।

No comments

Powered by Blogger.