ইলিয়াস আলী অন্তর্ধান রহস্য-হরতাল কোনো সমাধান নয়

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে। বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকারের সংস্থা তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী অভিযোগ করেছেন, র‌্যাব ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।


ইলিয়াস আলীর স্ত্রী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁকে হাজির করতে রিট করেছেন। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে ৪৮ ঘণ্টা পর পর তদন্তের অগ্রগতি জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দেখা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এর আগে গত বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলিয়াস আলীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। অর্থাৎ সরকারের শীর্ষ মহলও এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন। প্রধান বিরোধী দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও আছে। ওদিকে সিলেটে হরতাল চলছে। রবিবার সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
দলের একজন নেতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেলে যেকোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষুব্ধ হবে। বিএনপিও ক্ষুব্ধ। ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার সবারই আছে। বিক্ষুব্ধ জনতা আগের দিন সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, দলীয় সমর্থকদের বাইরে সাধারণ মানুষকেও ওই বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে। এটাই স্বাভাবিক। মানুষ নিজের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের গ্যাসগান ও পোশাক ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
রাজধানীর রাস্তা থেকে ড্রাইভারসহ ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান নিয়ে রাজনৈতিক সংকীর্ণতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। ইলিয়াস আলী বিরোধী দলের নেতা। সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। বাসা থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে তিনি আর ঘরে ফিরবেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। ইলিয়াস আলী রাজনীতি করেন। তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নানা সামাজিক সংযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। রাজনীতি করতে গিয়ে সব সময় সবার স্বার্থরক্ষা করে চলা যায় না। কিন্তু একটি মানুষ হঠাৎ করে রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাবে- এটা কেমন করে সম্ভব? বিরোধী দল দাবি করেছে, সরকারের সংস্থা ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া কতটা আইনসম্মত? যদি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলেও তো একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁকে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। ইলিয়াস আলীর ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিএনপি আমলে নিখোঁজ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামালউদ্দিনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করেছেন। এটাও শোভন নয়। সরকারি দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এটাও মনে রাখতে হবে, সেই শাসনামলের ওই সব ঘটনা আজ বিএনপিকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলীর উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সরকার ও বিরোধী দল- উভয় পক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ মুহূর্তে ইলিয়াস আলী অন্তর্ধান রহস্য সরকারের কাছে সর্বোচ্চ প্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। ক্ষুব্ধ বিরোধী দলকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। হরতাল দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বসে থাকলে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না। হরতাল বরং পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে চালিত করার সুযোগ করে দিতে পারে। সেটা যাতে না হয়, সে জন্য বিরোধী দলের উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সে পথে এরই মধ্যে পা রেখেছে। সিলেটের হরতালে সেখানকার এইচএসসি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়েছে। রবিবারও এইচএসসি পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিরোধী দল কি হরতালের বিষয়টি বিবেচনা করবে?

No comments

Powered by Blogger.