আবারও সোয়াইন ফ্লু-দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

সোয়াইন ফ্লু একটি ভয়ানক ও দ্রুত সংক্রমণযোগ্য ব্যাধি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উচ্চ তাপ বা জ্বর দেখা দিতে পারে, কাশি বা বমন দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সঠিক সময় যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া হলে এ রোগে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে।


এই সংক্রামক রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালের জুন মাসে। ইতিমধ্যেই বিগত কয়েক বছরে এ রোগে সংক্রমিত বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু এ রোগ সম্পর্কে এখনো মানুষকে সচেতন করা যায়নি এবং পর্যপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লুয়েঞ্জা ড্রাগ বা ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আবারও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলার নার্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ৩১ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা করে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে বেশ কয়েকজন রোগাক্রান্ত হয়েছে। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে। কিন্তু জানুয়ারি মাসেই এসব অঞ্চলে সোয়াইন ফ্লুতে অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, যা একটি অশনিসংকেত। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোতে এ রোগের বড় আকারে প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ রোগ এতটাই সংক্রামক যে একজন আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী আরেকজনকে সংক্রমণ করে থাকে। সুতরাং বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে এদিকে তীক্ষ্ন নজর রাখতে হবে, যাতে কোনোক্রমে এ রোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এমনিতেই দেশে স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। সরকারি হাসপাতালগুলোতে একদিকে ওষুধের অভাব, অন্যদিকে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ন্যূনতম চিকিৎসাপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত না করলে এ ধরনের রোগ দেশে বিপর্যয় টেনে আনতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দ্রুত এ রোগের ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্রসহ অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে দেশবাসীকে সতর্ক ও সচেতন করে তোলা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। সোয়াইন ফ্লু চিকিৎসার যথাযথ ওষুধ সারা দেশে সরবরাহ সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। অ্যান্টি ইনফ্লুয়েঞ্জা ওষুধ যেন ইউনিয়ন পর্যায়েও পর্যাপ্ত থাকে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেশে ফ্লু ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিষয়ক এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.