বিপদে করণীয় by দিদার-উল আলম

মানুষ মরণশীল। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত। আল্লাহকে অস্বীকারকারীকেও অবশ্যই মরতে হবে। মৃত্যু থেকে বাঁচার কোনো উপায় অতীতে ছিল না, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। মৃত্যুর ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে_ 'প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং অবশ্যই কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল তোমরা পূর্ণমাত্রায় প্রাপ্ত হবে।


তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই হবে প্রকৃত অর্থে সফলকাম।' (সূরা আলে ইমরান, ১৮৫ আয়াত)। মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, 'তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও থাকো।' (সূরা আন নিসা, ৭৮ আয়াত)। এরপরও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের ব্যাপারে বিশেষ করে মৃত্যুর ব্যাপারে উদাসীন থাকা কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিপদ-আপদে ও প্রিয়জনের বিচ্ছেদে মাত্রাতিরিক্ত কান্নাকাটিকে নিরুৎসাহিত করার কারণ এই যে, আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) ধৈর্য ও আত্মসংযমের নির্দেশ দিয়েছেন এবং হতাশা ও অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, 'হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা শক্তি অর্জন কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। ... আর আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাদের ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও শস্যহানি দ্বারা পরীক্ষা করব। যারা ধৈর্য ধারণ করে, যারা বিপদে পতিত হয়ে বলে যে, আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব, তাদেরই সুসংবাদ দিয়ে দাও।' (সূরা আল বাকারা, ১৫৩, ১৫৫ ও ১৫৬ আয়াত)। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'মুমিন বান্দার ওপর যে বিপদই আসুক না কেন, এমনকি তার পায়ে যদি একটা কাঁটাও ফোটে তবে তা দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মুছে দেন (সহিহ মুসলিম)। তিরমিযিতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, যখন তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ সংহার করেছিলে, তখন সে কী বলেছে? ফেরেশতারা বলেন, সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং তোমার কাছে তার ফিরে যাওয়ার কথা স্মরণ করেছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি কর এবং তার নাম রাখ 'বাইতুল হামদ' (প্রশংসার বাড়ি)। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেন, 'যখন আমার বান্দার কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হয় এবং সে তাতে ধৈর্য ও সংযম অবলম্বন করে, তখন জান্নাত ছাড়া তাকে দেওয়ার মতো আর কোনো প্রতিদান আমার কাছে থাকে না।' (সহিহ আল বুখারি)।
শোক ও সমবেদনা প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান, ধৈয ধারণের উপদেশ দান, তার দুঃখ, শোক ও বিপদের অনুভূতিকে হালকা করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। এটি সৎ কাজের আদেশ দান, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা এবং সততা ও খোদাভীতির কাজে সহযোগিতার আওতাভুক্ত। সমবেদনা ও সান্ত্বনার সর্বোত্তম ভাষা রাসূলের (সা.) নিম্নোক্ত হাদিস থেকে জানা যায়। সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সা.) এক কন্যা রাসূলের (সা.) কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন যে, তার এক পুত্র মৃত্যুর মুখোমুখি। রাসূল (সা.) দূতকে বললেন, 'যাও, ওকে (কন্যাকে) বল যে, আল্লাহ যা নেন, তা তারই জিনিস, আর যা দেন, তাও তারই জিনিস। সবকিছুই বান্দার কাছে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য রয়েছে। তাকে বল, সে যেন ধৈর্য ধারণ ও সংযম অবলম্বন করে।' এক সাহাবীকে দরবারে অনুপস্থিত দেখে রাসূল (সা.) তার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। এক ব্যক্তি বলল, হে রাসূল (সা.)! তার ছেলে মারা গেছে। রাসূল (সা.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি সমবেদনা জানালেন। অতঃপর বললেন, 'শোনো, তোমার ছেলে সারাজীবন তোমার কাছে থাকুক_ এটা তোমার বেশি পছন্দনীয়, না সে তোমার আগে গিয়ে জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকুক এবং তুমি মারা গেলে সে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিক_ এটা পছন্দনীয়? সাহাবী বললেন, সে আমার আগে জান্নাতে গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দিক_ এটাই পছন্দনীয়। রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে তোমার জন্য সেটিই নির্ধারিত রইল। সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আমার জন্য? রাসূল (সা.) বললেন_ 'না, সব মুসলমানের জন্য।' (আহমাদ, নাসায়ি)।

No comments

Powered by Blogger.