দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী হুকুমত কায়েমের আহ্বান

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম বলেছেন, গত ৪০ বছরের ইতিহাসে কোনো শাসকগোষ্ঠী ও তন্ত্র-মন্ত্রের ধারকরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ইসলামী হুকুমত কায়েম ছাড়া এ দেশে কখনো শান্তি আসবে না।

দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইসলামী হুকুমত কায়েমের পক্ষেই থাকবে। এ লক্ষ্যে দলের এক লাখ কর্মীকে তিন মাসের মধ্যে ২০ জন করে সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন মোড়ে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

সংবিধানের মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেওয়া, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জনদুর্ভোগ ও ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে  নির্বাচন এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশ থেকে ইসলাম ছাড়া মানবতার মুক্তি নেই এ স্লোগান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এগুলো হলো : কর্মী সংগ্রহ, মে মাসব্যাপী সারা দেশের থানায় থানায় গণজমায়েত, জুনে জেলায় জেলায় গণজমায়েত, ১ মে ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশ, পানি-বিদ্যুৎ, গ্যাস সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে ১১ মে ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ইসলামের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসব্যাপী সারা দেশে বিশেষ দাওয়াতি অভিযান।

ইসলামী আন্দোলনের আমির দুই নেত্রীর সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ আজ দুই মহিলার ঝগড়ায় উত্তপ্ত। এই উত্তপ্ত পরিবেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগামী নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীককে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে কোনো জোটে না গিয়ে এককভাবে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যারা চার দলীয় জোটকে ইসলামের রক্ষাকবচ বলে মনে করেন, এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনার উল্লেখ করে আমির বলেন, দেশে এখন বসবাসের কোনো পরিবেশ নেই, জনগণের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। 

তিনি বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে প্রতিদিন ইসলামের দুর্দশা বেড়ে চলেছে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেওয়া হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতা রয়েছে। কিন্তু সেখানে দাঙ্গা হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার বার। অন্যদিকে রাশিয়ায় এখন বেড়ে চলেছে দারিদ্র্য এবং আমেরিকাতেও ৫০ শতাংশ মানুষ গৃহহারা। মানুষের তৈরি কোনো তন্ত্র-মন্ত্র শান্তি দিতে পারবে না উল্লেখ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জনসম্মুখে হাজির করার আলটিমেটাম দেন।

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ইলিয়াস আলীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জনতার সামনে হাজির করুন। নইলে সরকারের গদিতে বসার আর কোনো অধিকার নেই আপনাদের।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো নয়। দেশটা এখন দুঃশাসন আর অরাজকতায় ভরা। এই দুর্যোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, আপনারা বলেন, আমরা পীরের কথায় জীবন দিতে প্রস্তুত। অথচ যখন দেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা বাদ দেওয়া হয়, তখন এর বিরুদ্ধে আপনারা কেউ জীবন দেননি। তাই শুধু কথায় নয়, সত্যি সত্যি আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলের জন্য জীবন দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের আরো একটি কথা বলতে চাই। শুধু ওয়াজ-নসিহত নয়, যদি রাস্তায় নেমে রাজনীতি করেন এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চান তবেই আপনাদের সঙ্গে আমি আছি।’

‘আর একটা কথা মনে রাখবেন। দিনে চরমোনাইয়ের পীর আর রাতে হাসিনা-খালেদা, ভোট দেওয়ার সময় নৌকা-ধানের শীষ আর করা যাবে না।’

মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত উল্লাহ আল ফরিদী, ঢাকা মহানগর সভাপতি এটিএম হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.