আবারও পচা গম আমদানি!

আবারও পচা গম আমদানি করা হয়েছে এবং আমদানি করেছে সেই একই আমদানিকারক! চট্টগ্রাম সাইলোর প্রাথমিক পরীক্ষায় জাহাজভর্তি গমের একটি বড় অংশই পচা বলে প্রতীয়মান হওয়ায় গম খালাসের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পচা গম খালাসের কাজ বন্ধ রাখা যাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।


অতীতেও পচা প্রমাণিত হওয়ার পরও খালাস বন্ধ রাখা যায়নি। কারণ এর সঙ্গে যোগসাজশ থাকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের রাঘববোয়ালদের।
রবিবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম সাইলোতে রাসায়নিক পরীক্ষার যেটুকু সুযোগ আছে তার ভিত্তিতে সেখানকার সহকারী রসায়নবিদ পচা গমের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন। রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়াও গমের রং ও চেহারা দেখেও ভালো ও পচা গমের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়। অনেক গমের আবার অঙ্কুরোদ্গম হয়েছে। তার পরও চট্টগ্রাম সাইলো থেকে গমের নমুনা আরো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন ঢাকার রসায়নবিদ কী বলেন, তা দেখার অপেক্ষা। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকবে না। ঢাকার খাদ্য বিভাগও যদি এই গমকে পচা বলে তখন আমদানিকারক যাবে অন্যান্য গবেষণাগারে। আর যে দেশে মানুষ হত্যার পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে উল্লেখ করার মতো ঘটনা ঘটছে, সেখানে পচা গমকে স্বাভাবিক গম বলে রিপোর্ট 'ম্যানেজ' করাটা মোটেও কঠিন কাজ নয়। আগের বারও তাই ঘটেছিল। রিপোর্টে পরস্পরবিরোধী এই অজুহাত দেখিয়ে পচা গমই খালাস করা হয়েছিল। তারপর কী ঘটবে? পচা গমের সংস্পর্শে এসে ভালো গমেও পচন ধরবে। যেহেতু সাইলোতে ঢোকার পর গমের মালিক হয়ে যাবে সরকার, তাই হয়তো সে পচা গম কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা রিলিফ হিসেবে বিতরণ করা হবে। সেই গমের আটা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। সেগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। অনেক কম দামে কেনা এই গম থেকে আমদানিকারক এবং তাকে সহযোগিতাকারী সরকারি অসাধু আমলারা এর মধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে।
শুধু আমদানি করা গমই নয়, দেশের ভেতর থেকে সংগ্রহ করা ধান-চালের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটে। সাইলোতে সংরক্ষণের জন্য ধান-চালের আর্দ্রতার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এর চেয়ে বেশি আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান-চাল সাইলোতে রাখলে সেগুলোতে দুই-তিন মাসের মধ্যেই পচন ধরে। সেই পচন তখন গোটা সাইলোতে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ অর্থ আত্মসাতের লোভে বেশি আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান-চালই কেনা হয়। বেশি শুকালে ওজন কমে যায়, তাই কৃষকও কিছুটা কম দামে বেশি আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান-চাল বিক্রি করে দেয়। এভাবে সংগৃহীত অর্থও ভাগাভাগি হয় রাঘববোয়ালদের মধ্যে। ক্ষুদ্র সাইলো কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলেও সে প্রতিবাদ ধোপে টেকে না। অবশেষে সেই পচা চালই যায় খোলাবাজারে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য কর্মসূচিতে। বঞ্চিত ও প্রতারিত এ দেশের দরিদ্র মানুষ। আমরা চাই, মহাজোট সরকার তাদের দিনবদলের অঙ্গীকার কিছুটা হলেও পূরণ করার চেষ্টা করবে। এসব প্রতারক চক্রকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.