রাজনীতি-শান্তি ও সমঝোতা চাই

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে হরতাল সর্বশেষ ধাপ_ এমন পুঁথিগত বিবেচনা যাদের, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তাদের জন্য প্রায়শই হতাশা ডেকে আনে। এখানে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি কখনও কখনও ঘন ঘন দেওয়া হয় এবং সে তুলনায় জনসভা, মিছিল ও প্রচারমূলক অন্যান্য কর্মসূচি হয়ে পড়ে গৌণ।


তবে সততই প্রত্যাশা থাকে, রাজনৈতিক দলগুলো গণমানুষের স্বার্থ-প্রয়োজনকে সর্বাগ্রে স্থান দেবে এবং তাদের দুর্ভোগের মাত্রা সর্বনিম্ন মাত্রায় রাখায় সচেষ্ট হবে। বুধবার রাজধানীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতীক অনশন কর্মসূচি কিন্তু এ প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পূরণ করে। এ কর্মসূচি ছিল দলের নেতাকর্মীদের জন্য এবং তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। সংবাদপত্র এবং বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনশন কর্মসূচির ব্যাপক কভারেজ দেয়। কর্মসূচি শেষে প্রদত্ত ভাষণে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া 'আর জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর-ধ্বংসের রাজনীতি নয়, হরতাল নয়, মানুষকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে' বলে যে বক্তব্য রেখেছেন সেটাও উৎসাহব্যঞ্জক। যদিও একই সমাবেশে তিনি 'জনগণের সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের বর্তমান সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে' বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তার সঙ্গে আন্দোলনের ধরন সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবুও দেশবাসী বিশ্বাস করতে চায় যে, বিরোধীদলীয় নেত্রী আন্তরিকভাবেই হরতাল-অবরোধের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চান। 'সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে' বলে যে বক্তব্য সেটা হয়তো আমাদের রাজনীতির ভাষায় যে অসংযম তারই বহিঃপ্রকাশ, যার মূল লক্ষ্য সাধারণত থাকে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করা। এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদেরই মুখে লাগাম টানার কৌশল রপ্ত করতে হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জারি হলেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন ক্ষমতা পরিচালনা সম্পর্কে একটি আপসরফার সম্ভাবনার কথা বারবার বলা হচ্ছে। দেশবাসী আশা করবে যে, এটা বিরোধী দলকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়, বরং তা আন্তরিকভাবেই বলা হচ্ছে। বিরোধী দলের অনশন কর্মসূচির দিনেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, 'সংবিধান প্রশ্নে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। যে কোনো বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে জাতীয় সংসদে আমরা আলোচনা করতে রাজি।' তবে এ ক্ষেত্রে বিরোধী দল এগিয়ে এলেই আলোচনা_ এমন মনোভাব কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে না। বরং মহাজোট সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের উচিত হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো বিরোধীয় ইস্যুর নিষ্পত্তির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রধান বিরোধী দল হরতাল-ধর্মঘট থেকে সরে আসার যে অঙ্গীকার করেছে তাকেও সরকারের তরফে স্বাগত জানানো উচিত। তাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, বিরোধী দল হরতাল প্রশ্নে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সরকারের ওপর যেন দায় চাপিয়ে দিতে না পারে। এ ঘটনা তারা নিশ্চয়ই বিস্মৃত হবে না যে বুধবারের অনশনের প্রধান একটি ইস্যু ছিল, এক সপ্তাহ আগে হরতাল চলাকালে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশের নির্দয় লাঠিপেটার ঘটনা। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.