ইলিয়াস আলী-তাকে খুঁজে বের করতেই হবে

এবার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হলেন সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী। শুধু সাবেক এমপিই নন, তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিএনপির সভাপতিও। প্রধান বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতার আকস্মিক ও রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।


নানা স্থানে বিক্ষোভ, অবরোধ, ভাংচুর হয়েছে। গতকাল নয়াপল্টন কিছুক্ষণ 'রণক্ষেত্রে' পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার সিলেটে হরতাল পালিত হয়েছে। রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শুধু বিএনপিদলীয় নেতাকর্মীদের জন্যই নয়_ ইলিয়াস আলীর মতো একজন রাজনীতিকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার পথে মাঝ রাস্তা থেকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারকে। গাড়ির আরোহীদের নিয়ে গেলেও গাড়িটি পাওয়া গেছে মাঝ রাস্তায়। পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। আবার বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের কোনো আটক বা গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও অস্বীকার করা হয়েছে। তবে অতি দ্রুত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঘটনাটি নিয়ে তৎপর হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের এ উদ্যোগ সত্ত্বেও বলতে হয়, নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী যদি এমন ঘটনা ঘটায় তবে সেটি সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষেই ঘটে বলে সাধারণ্যে বিশ্বাস জন্মায়। আবার কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যদি এমন ঘটনার পেছনে থাকে তবে তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই নির্দেশ করে। স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এগুলোর প্রভাব পড়ে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার নানা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ফলে দ্রুত সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তাকে উদ্ধারের সমস্ত তৎপরতা চালানো উচিত। শুধু ইলিয়াস আলীই নন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম গুম হওয়ার ঘটনাটি বহুল আলোচিত। অপহরণ ও গুমের জন্য প্রধানত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারা ক্রসফায়ারের বিকল্প হিসেবে অপহরণ ও গুমের পথ বেছে নিয়েছে।
সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদনে ইলিয়াসের রহস্যজনক নিখোঁজের একাধিক সম্ভাব্য কারণের কথা বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরকারের নেপথ্য হাতের কথা অস্বীকার করে 'নিখোঁজ' ইলিয়াসকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার নেপথ্যে যারাই থাক না কেন, এই ইস্যু গুরুতর সন্দেহ নেই। বিরোধী দল এ ব্যাপারে রোববার হরতাল ডেকেছে। আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে। তাই আমরা মনে করি, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ খুবই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.